ওবিসিটি বা স্থূলতা বর্তমানে একটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সমস্যা। অতিরিক্ত ওজন শুধু শারীরিক গঠনকেই প্রভাবিত করে না, বরং ডেকে আনতে পারে একাধিক মারাত্মক রোগ। সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর গবেষণায় উঠে এসেছে যে অত্যধিক স্থূলতা (সিভিয়ার ওবিসিটি) শরীরে ১৬টি ভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। এই রোগগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিচিত এবং বহু মানুষের কাছে উদ্বেগের কারণ।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের সময় শ্বাসকষ্ট (স্লিপ অ্যাপনিয়া), টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং ফ্যাটি লিভারের মতো রোগগুলি স্থূলতার সঙ্গেই বিশেষভাবে যুক্ত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, যখন কোনও ব্যক্তির বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) ৪০ বা তার বেশি হয় অথবা স্থূলতাজনিত রোগ উপস্থিত থাকে, তখন সেই পরিস্থিতিকে সিভিয়ার ওবিসিটি বা টাইপ ৩ ওবিসিটি বলা হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পর্যায়টি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
অতীতে বিভিন্ন রোগের কারণ অনুসন্ধানের সময় স্থূলতাকে আলাদাভাবে দেখা হত। ফলে, স্থূলতাই যে এই রোগগুলির অন্যতম প্রধান কারণ, তা অনেক সময় স্পষ্ট বোঝা যেত না। এমনকি স্থূলতা ঠিক কী কী রোগের জন্ম দিতে পারে, সে বিষয়েও সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। তবে, আমেরিকার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি বৃহৎ আকারের গবেষণা পরিচালনা করেছেন। তাঁরা ২.৭ লক্ষেরও বেশি মানুষের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। এই গবেষণার ফলাফল অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের শরীরে স্থূলতার মাত্রা যত বৃদ্ধি পায়, ততই ১৬ ধরনের রোগের প্রকোপও বাড়তে থাকে। স্থূলতার বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে এবং প্রতিটি পর্যায়ে রোগের ঝুঁকি ভিন্ন ভিন্ন। তবে, সিভিয়ার ওবিসিটির ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
স্থূলতা বা ওবিসিটির কারণে যে ১৬টি রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, সেই তালিকাটি বেশ দীর্ঘ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, হার্ট ফেলিওর, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, কিডনির দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, শিরায় রক্ত জমাট বাঁধা (ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস), গেঁটেবাত, ফ্যাটি লিভার (অ্যালকোহলবিহীন), পিত্তথলিতে পাথর, স্লিপ অ্যাপনিয়া, হাঁপানি, অ্যাসিডিটি, বুকজ্বালা (জিইআরডি), অস্টিওআর্থ্রারাইটিস এবং হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, এই সমস্ত রোগের মধ্যে স্লিপ অ্যাপনিয়া, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং ফ্যাটি লিভারের সঙ্গে স্থূলতার সরাসরি এবং সবচেয়ে শক্তিশালী যোগসূত্র রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে স্থূলতার সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ। এই সমস্যার সঠিক সময়ে চিকিৎসা করানো অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায়, শরীরে একাধিক রোগ বাসা বাঁধতে পারে এবং জীবনযাত্রার মান মারাত্মকভাবে হ্রাস পেতে পারে। তাই, যাদের স্থূলতার সমস্যা রয়েছে, তাদের উচিত এই বিষয়টিকে অবহেলা না করা এবং অতি অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। সময় থাকতে সতর্ক না হলে, ভবিষ্যতে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।