খেলনা বা খাবার গলায় আটকে বিপদ! দ্রুত চেনার উপায় ও জরুরি পদক্ষেপ

ছোট শিশুদের স্বভাবই হলো হাতের কাছে যা পায়, তাই মুখে দেওয়া। এই নিরীহ অভ্যাস মুহূর্তেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ডেকে আনতে পারে, যদি অসাবধানে কোনো ছোট বস্তু শ্বাসনালীতে আটকে যায়। এই ধরনের ঘটনা যত দ্রুত শনাক্ত করা যায়, ততই শিশুর জন্য মঙ্গল।

হঠাৎ করে যদি কোনো বাচ্চা অনবরত কাশতে শুরু করে বা বিষম খেতে থাকে এবং তার ঠিক আগেই যদি সে কোনো ছোট জিনিস নিয়ে খেলছিল, তবে বুঝতে হবে সম্ভবত তার গলায় কিছু আটকে গেছে। এই পরিস্থিতিতে বাচ্চার মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা বের হতে পারে। কাশি থাকবে, তবে জ্বর বা সর্দির মতো অন্য কোনো উপসর্গ দেখা যাবে না।

সন্দেহ হলেই নিন ত্বরিত ব্যবস্থা:

শ্বাসনালীতে কিছু ঢুকেছে বলে সন্দেহ হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

যদি চোখে দেখেন: বাচ্চার মুখ খুলে যদি আটকে থাকা জিনিসটি স্পষ্ট দেখতে পান, তাহলে সাবধানে তা বের করার চেষ্টা করুন। তবে, যদি জিনিসটি দেখা না যায়, তাহলে খোঁচাখুঁচি করবেন না। এতে সেটি আরও গভীরে চলে যেতে পারে।
কাশতে দিন: বাচ্চা যদি স্বাভাবিকভাবে কাশতে পারে, তবে তাকে কাশতে দিন। কাশির মাধ্যমে অনেক সময় আটকে থাকা জিনিসটি আপনাআপনি বেরিয়ে আসে।
শ্বাসকষ্ট হলে পিঠে চাপড় দিন (এক বছরের কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে): যদি দেখেন শিশুর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, তাহলে তাকে আপনার কোলের উপর উপুড় করে শুইয়ে দিন, খেয়াল রাখবেন যেন তার মাথা নিচের দিকে ঝুলে থাকে। এরপর তার পিঠের মাঝখানে, একটু উপরের দিকে আপনার হাতের তালুর নিচের অংশ দিয়ে দ্রুত পাঁচবার চাপড় দিন। কাজ না হলে এই প্রক্রিয়া পুনরায় করতে পারেন।
পেটে ধাক্কা দিন (এক বছরের বেশি বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে): বাচ্চার পেছনে হাঁটু মুড়ে অথবা সোজা হয়ে দাঁড়ান। তার বগলের নিচ দিয়ে দুই হাত ঢুকিয়ে জাপটে ধরার মতো করে পেটের উপরের অংশে আপনার হাত রাখুন। এক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে, শিশুর বুকের ঠিক নিচে, যেখানে পাঁজরের শেষ হাড় মিলিত হয়েছে, সেখানে রাখুন। অন্য হাত দিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাতটির কবজি ধরুন। এরপর দুই হাত দিয়ে ওপরের দিকে এবং ভেতরের দিকে দ্রুত পাঁচবার চাপ দিন।
যদি কাজ না হয় বা জ্ঞান না থাকে:

উপরের পদ্ধতিগুলি প্রয়োগের পরেও যদি শিশুর শ্বাসকষ্ট না কমে অথবা সে জ্ঞান হারায়, তাহলে অবিলম্বে কাউকে সাহায্যের জন্য ডাকুন। একইসাথে, মুখ থেকে মুখে শ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করুন এবং দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান।

এই দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্কতা জরুরি:

ছোট শিশুদের নাগালের বাইরে ছোট পুতি, মার্বেল, বোতাম, ফলের বীজ এবং ছোট পার্টসযুক্ত খেলনা রাখা উচিত। শিশুদের খেলনা বা জামা কেনার সময়ও খেয়াল রাখতে হবে যেন সেগুলোতে ছোট পুঁতি বা ঘণ্টা লাগানো না থাকে, যা খুলে গিয়ে শিশুরা মুখে দিতে পারে। সামান্য সতর্কতা অবলম্বন করলেই এই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy