মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। এটি শরীরের রক্ত পরিশোধন করে এবং জমে থাকা বর্জ্য বের করে দেয়। তাই কিডনির সামান্য সমস্যাও জীবনকে অনিশ্চিত করে তুলতে পারে। কিডনির নানা সমস্যার মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে সাধারণ হলো কিডনিতে পাথর (Kidney Stone) বা বৃক্কে পাথর জমার সমস্যা।
🧱 কিডনিতে পাথর জমার প্রধান কারণ:
কিডনিতে পাথর জমার প্রকৃত কারণ পুরোপুরি জানা না গেলেও, কিছু অভ্যাস ও শারীরিক পরিস্থিতি এই ঝুঁকি বাড়ায়:
-
শরীরে জলের স্বল্পতা: কম পরিমাণে জল পান করা।
-
বারবার কিডনিতে ইনফেকশন: ঘন ঘন কিডনি বা মূত্রনালীর সংক্রমণ।
-
অতিরিক্ত দুগ্ধজাত খাবার: অত্যাধিক পরিমাণে দুধ, পনির বা অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া।
-
ক্যালসিয়ামের আধিক্য: শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রাতিরিক্ত আধিক্য।
⚠️ কিডনিতে পাথরের লক্ষণ:
কিডনিতে পাথর খুব ছোট হলে তা কোনো ব্যথা ছাড়াই দীর্ঘদিন শরীরে থাকতে পারে। কিন্তু যখন তা নড়াচড়া করে বা মূত্রনালীর পথে আসে, তখন লক্ষণগুলি স্পষ্ট হয়:
-
তীব্র ব্যথা: কোমরের পেছন দিকে তীব্র ব্যথা হওয়া। এই ব্যথা সাধারণত খুব বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয় না, তবে এটি কিডনির অবস্থান থেকে তলপেটেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
-
রক্তবর্ণের প্রস্রাব: প্রস্রাবের রং রক্তবর্ণ বা লালচে হওয়া।
-
বমি বমি ভাব: বমি বমি ভাব অনুভব করা। অনেক সময় বমিও হতে পারে।
🩺 রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা:
কোমরের অবস্থানে ব্যথা বা রক্তবর্ণের প্রস্রাব হলে চিকিৎসকরা সাধারণত কিডনির ইনফেকশন বা কিডনিতে পাথরের সম্ভাবনা চিন্তা করেন। সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য কিডনির এক্সরে, আলট্রা সনোগ্রাম এবং প্রস্রাবের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
-
প্রাথমিক চিকিৎসা: অনেক ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান এবং যথাযথ ওষুধ সেবনের মাধ্যমেই পাথর বেরিয়ে গিয়ে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
-
অস্ত্রোপচার: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে বা পাথরের আকার বড় হলে অস্ত্রোপচারই একমাত্র উপায়।
✅ কিডনি স্টোনের ঝুঁকি এড়ানোর সতর্কতা:
কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং পাথর জমার ঝুঁকি এড়াতে এই নিয়মগুলি অবশ্যই মেনে চলুন:
-
প্রচুর জল পান: কিডনি স্টোনের ঝুঁকি এড়াতে হলে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে।
-
প্রস্রাব চেপে রাখবেন না: প্রস্রাবের বেগ আসলে চেষ্টা করবেন সঙ্গে সঙ্গে প্রস্রাব করার। কখনও প্রস্রাব আটকে বা চেপে রাখবেন না।
-
ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত খাবার: প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত খাবার খান।
-
দুগ্ধজাত খাবারে নিয়ন্ত্রণ: দুধ, পনির বা অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার অতিরিক্ত মাত্রায় না খাওয়াই ভালো।
-
ইউরিন ইনফেকশনে সতর্কতা: বারবার ইউরিন ইনফেকশন দেখা দিলে দ্রুত চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।