বিনোদন জগতের গ্ল্যামারের নিচে লুকিয়ে থাকে কর্মীদের কঠিন মানসিক চাপ ও উদ্বেগ। দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, কাজের অনিশ্চয়তা ও আর্থিক অস্থিরতার কারণে মানসিক অবসাদ নিত্যসঙ্গী। সম্প্রতি ইন্ডাস্ট্রির দুই চিত্রগ্রাহকের আত্মহত্যা সেই চরম বাস্তবতাকে সামনে এনেছে। এই অনভিপ্রেত ঘটনা রুখতে এবার টালিগঞ্জ ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন কাউন্সিলের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের উদ্যোগে এক নতুন পদক্ষেপ নিল ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (FCTWEI)।
বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে ফেডারেশনের তরফে ঘোষণা করা হয়, টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির কোনও শিল্পী বা কলাকুশলী মানসিক অবসাদের শিকার হলে, তাঁরা এখন থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডাক্তারি পরিষেবা পাবেন। কাজের কঠোর চাপ এবং সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে অনেক টেকনিশিয়ানই মানসিক অবসাদের শিকার হন। এই সমস্যা শুধু কলাকুশলীদের নয়, অনেক নবীন শিল্পীরাও এই কারণে জীবন শেষ করেছেন। সেই কারণেই টেকনিশিয়ানদের শারীরিক দিকের পাশাপাশি মনের খবরও রাখার উদ্যোগ নিয়েছে ফেডারেশন।
এই যুগান্তকারী উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছে এসএসকেএম (পিজি) হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট অফ সাইকায়াট্রি কর্তৃপক্ষ। ফেডারেশনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী সাত দিনের মধ্যেই টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওতে পিজি হাসপাতালের পক্ষ থেকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তিন দিন করে বসবেন। তাঁরা মানসিক অবসাদে ভোগা শিল্পী-কলাকুশলীদের বৈজ্ঞানিক পরামর্শ দেবেন। প্রয়োজনে এই কর্মীরা ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে এস এস কে এম হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট অফ সাইকায়াট্রিতে সুচিকিৎসার সুযোগ পাবেন।
ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস জানান, “অনেকদিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছেন এমন কয়েকজনের কথা শুনছিলাম। অবশেষে পাশে পেলাম এস এস কে এম হাসপাতালকে।” পরিচালক-প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার 30 বছরের কেরিয়ারে আমি কখনও দেখিনি যে আমাদের টেকনিশিয়ানদের মনকে কেন্দ্র করে এমন একটা সভা হচ্ছে।” অন্যদিকে, প্রযোজক নীলাঞ্জনা শর্মা ১৪ ঘণ্টার কাজের সময়সীমাকে ‘আশীর্বাদ’ উল্লেখ করে বলেন, “আর্টিস্ট, টেকনিশিয়ান সবাই আমাদের কাছের। নিজের খারাপ থাকার কথা এসে ফেডারেশনকে জানালে ফেডারেশন পাশে থাকবে।” পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় সকলকে এই সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।