ভালবাসা কখনও সময় নেয়, কখনও আবার মুহূর্তেই জাগে। কিন্তু সামির বিদওয়ান্স পরিচালিত ‘তু মেরি ম্যায় তেরা’ ছবিতে রুমি আর রে-র প্রেম যেন অনেকটা ‘ইনস্ট্যান্ট কফি’র মতো—দশ দিনেই সব শেষ। ধনী ছেলে আর ছোট শহরের মেয়ের সেই মান্ধাতা আমলের ফর্মুলা, বিদেশের লোকেশন আর সাজানো সুখের পরিণতি—সবই আছে। নেই শুধু একটাই জিনিস, যা সিনেমার প্রাণ—আবেগ।
ধর্মা প্রোডাকশনের ছবি মানেই বড় বাড়ি, গ্ল্যামার আর ঝকঝকে সেট। কিন্তু গল্পের বুনোট এতটাই দুর্বল যে দর্শক বাস্তব জীবনের সঙ্গে এক শতাংশও মিল খুঁজে পাবে না। রুমি আর রে ৯০-এর দশকের আদলে নিজেদের প্রেমের গল্প সাজাতে চাইলেও, সেই চিরন্তন ‘টান’ বা ‘দ্বন্দ্ব’ তৈরিতে চিত্রনাট্যকার পুরোপুরি ব্যর্থ। ফলে পর্দার গ্ল্যামার চোখ টানলেও মন ছুঁতে পারেনি।
কার্তিক আরিয়ান আর অনন্যা পাণ্ডেকে আলাদা দৃশ্যে ভালো লাগলেও, জুটি হিসেবে তাঁদের রসায়ন একদমই পানসে। রোমান্টিক ছবিতে যে ‘স্পার্ক’ বা উষ্ণতা দর্শক আশা করে, তা এখানে কার্যত অনুপস্থিত। কার্তিকের সেই চিরচেনা ‘ইন্ডাস্ট্রির বাইরের কিউট বয়’ ইমেজও এবার বড় একঘেয়ে ঠেকছে। অন্যদিকে, নায়িকাকে শুরুতে অপমান করে পরে প্রেমে পড়ে মহৎ সাজার ক্লিশে হিরোিজম এখনকার দর্শকদের কাছে আর গ্রহণযোগ্য নয়।
ছবির বড়সড় ফ্লপ হওয়ার সম্ভাবনা রুখে দিতে পারে একমাত্র জ্যাকি শ্রফ ও নীনা গুপ্তার অভিনয়। এই দুই অভিজ্ঞ অভিনেতা যখনই স্ক্রিনে এসেছেন, তখনই প্রাণ ফিরে পেয়েছে চিত্রনাট্য। তবে ছবির মূল দ্বন্দ্ব এতটাই তুচ্ছ যে হাসি পায়। নায়কের সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা—তাঁকে নাকি বাধ্য হয়ে আমেরিকায় থাকতে হচ্ছে! এমন ছোট বিষয়কে বড় আবেগপ্রবণ সমস্যা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হাস্যকর মনে হয়েছে।
সবশেষে, ‘তু মেরি ম্যায় তেরা’ আদতে একটি চকচকে কিন্তু ফাঁপা সিনেমা। সুন্দর মোড়কের ভেতরে উপহার না থাকলে যেমন লাগে, এই ছবিও তেমনই। স্রেফ সুন্দর ফ্রেম আর ভালো গান দিয়ে যে তিন ঘণ্টার বৈতরণী পার হওয়া যায় না, এই ছবি তার অন্যতম প্রমাণ। জেন-জি দর্শকদের জন্য এটি মোটেও আদর্শ প্রেমের গল্প হয়ে উঠতে পারল না