কুমার শানুর নামে ‘ভুয়ো কনটেন্ট’ তৈরি! AI-এর অপব্যবহারে দিল্লি হাইকোর্টে ঐতিহাসিক জয় পেলেন সুরসম্রাট

যে কণ্ঠস্বরটি একসময় গোটা দেশের প্রেমের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছিল, যে গান শুনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভালোবেসেছে, সেই সুরসম্রাট কুমার শানু এবার লড়লেন এক অন্য লড়াই। গান কিংবা সুরের জন্য নয়, প্রযুক্তির অপব্যবহারের বিরুদ্ধে— আদালতের মঞ্চে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে তাঁর নাম, ছবি, কণ্ঠস্বর ও পুরো ব্যক্তিত্ব নকল করে অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে নিজেই মামলা করেন বলিউডের ‘মেলোডি কিং’।

১৫ অক্টোবর দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি মনমিত প্রীতম সিং অরোরার বেঞ্চে এই মামলায় জারি হল এক যুগান্তকারী অন্তর্বর্তী নির্দেশ। আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ— কুমার শানুর নাম, ছবি, কণ্ঠ, ব্যক্তিত্ব বা তাঁর কোনও দিক— অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। তাঁর ব্যক্তিসত্তাকে কাজে লাগিয়ে কেউ বাণিজ্যিক লাভ তুলতে পারবে না, তা সে ভিডিও, ফটোগ্রাফ, জিআইএফ বা বিকৃত ছবি (Morphed Image)— যাই হোক না কেন।

‘Personality Rights’-এর বড় জয়, যাঁর খ্যাতি দীর্ঘদিনের, তাঁর সম্মান রক্ষা আবশ্যিক
গায়ক কুমার শানুর মূল দাবি ছিল, এই অননুমোদিত ব্যবহার তাঁর ‘personality rights’ ও ‘publicity rights’-এর সরাসরি লঙ্ঘন। এমনকি তিনি তাঁর বিখ্যাত নাম ‘Kumar Sanu’-কেও একটি ট্রেডমার্ক হিসেবে সুরক্ষার দাবি জানান।

বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, কুমার শানু ৪২ বছরেরও বেশি সময় ধরে সংগীত জগতে নিজের সুনাম ও খ্যাতি তৈরি করেছেন। তাই তিনি একজন সেলিব্রিটি। আদালতের মতে, একজন সেলিব্রিটি হিসেবে তাঁর নাম, ছবি বা চেহারার মতো ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলি ‘protectable elements’।

আদালত এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে জানায়, যদি এই অপব্যবহার বন্ধ না করা হয়, তবে তাঁর সুনাম ও মর্যাদার অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। স্পষ্টত বলা হয়, একজন শিল্পী নিজের বিকৃত বা অপমানজনক উপস্থাপনের বিরুদ্ধে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার পূর্ণ অধিকার রাখেন।

অশ্লীল মন্তব্য ও বিকৃত কণ্ঠে আঘাত— Google, Meta-র বিরুদ্ধে যুক্তি
গায়কের পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট সানা রইস খান যুক্তি দেন, গায়কের নাম ও চেহারার অননুমোদিত ব্যবহার সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। বহু ক্ষেত্রেই AI-এর সাহায্যে কুমার শানুর কণ্ঠ ও মুখ বিকৃত করে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সেখানে অশ্লীল ভাষা বা অপমানজনক মন্তব্যও থাকছে। অ্যাডভোকেট সানা রইস খান জানান, এতে সাধারণ মানুষ ভুলভাবে মনে করছেন, ওই ভুয়ো কনটেন্ট বা বিজ্ঞাপনে কুমার শানুর অনুমোদন আছে, যা তাঁর সুনাম নষ্ট করছে। অভিযোগটি কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুযায়ী সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য বলেও দাবি করা হয়।

প্রতিপক্ষ হিসেবে এই মামলায় উপস্থিত ছিল গুগল, মেটা, ফ্লিপকার্ট ও অ্যামাজনের মতো সংস্থাগুলি। মেটা (ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম) আদালতকে জানায় যে অভিযোগ করা কয়েকটি অ্যাকাউন্ট ইতিমধ্যেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গুগলও জানায়, ভুয়ো ইউআরএলগুলি সরিয়ে দেওয়ার কাজ চলছে এবং আদালতের নির্দেশ পুরোপুরি মেনে চলা হবে। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ফ্লিপকার্ট ও অ্যামাজনও আদালতের সমস্ত নির্দেশ মানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

নব্বইয়ের দশকের সেই ‘মেলোডি কিং’, যাঁর কণ্ঠস্বর ভালোবাসার প্রতিশব্দ ছিল, সেই কুমার শানুর এই আইনি জয় প্রযুক্তির এই যুগে শিল্পীর ‘ব্যক্তিগত সত্তার অধিকার’ রক্ষার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হল।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy