বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগের অভাবে বহু প্রতিভাবান অভিনেতা হারিয়ে যান। ২০০৩ সালে শাহিদ কাপুর এবং অমৃতা রাওয়ের সঙ্গে কেন ঘোষ পরিচালিত জনপ্রিয় ছবি ‘ইশক ভিশক’-এ অভিনয় করে পরিচিতি পেয়েছিলেন অভিনেতা বিশাল মালহোত্রা, তিনিও একসময় অভিনয় জগৎ থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন। তবে এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা, বিজ্ঞাপনী সংস্থার মালিক এবং বিখ্যাত ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে পরিচিত।
বিশাল মালহোত্রা সম্প্রতি একটি TEDx ইভেন্টে এসে তাঁর অভিনয় জীবন ছেড়ে দেওয়ার পেছনের মূল কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি জানান, যখন তিনি বড় প্রযোজকদের কাছে নায়কের বন্ধুর চরিত্রের বাইরে আরও ভালো এবং ভিন্নধর্মী ভূমিকার জন্য আবেদন করতেন, তখন তাঁদের সোজা উত্তর ছিল ‘না’।
এক সাক্ষাৎকারে বিশাল মালহোত্রা আরও বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করেন। একটি ভিন্ন চরিত্রের জন্য অনুরোধ করায় এক প্রভাবশালী প্রযোজক নাকি তাঁর ওপর ভীষণ রেগে যান। এর ফলস্বরূপ তাঁকে ইন্ডাস্ট্রিতে ‘একঘরে’ (Ostracized) করে দেওয়া হয় এবং টানা দুই বছর তাঁর হাতে কোনো কাজ ছিল না।
তিনি বলেন, “যখন কোনো খুব প্রভাবশালী মানুষ আপনার কাজ করার ক্ষমতাকে মেনে নিতে চান না বা বাতিল করে দেন, তখন আপনার সব শেষ হয়ে যায়। আমার হাতে তখন দুই বছর ধরে কোনো কাজ ছিল না। তাই আমি খুবই ভয় পেয়েছিলাম।”
জীবনের কঠিন সময়ে তাঁর ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়ের শেখানো টাকা-পয়সা সামলানোর অভ্যাসটাই তাঁকে রক্ষা করেছিল। অভিনয় ছেড়ে আসার পর তিনি নিজের একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা শুরু করেন।
ব্যবসা প্রসঙ্গে বিশাল মালহোত্রা বলেন, “আমি আমার নিজের অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সি তৈরি করেছিলাম এবং অনেক বিজ্ঞাপনের ভিডিও বানাই। এরপর রিলায়েন্সের মতো ভারতের বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে কাজ শুরু করি। সেই সময় আমি টিস্যু পেপার থেকে শুরু করে টয়লেট রোল পর্যন্ত সব ধরনের কাগজের জিনিসপত্র বিক্রি করতাম।”
NFT-এর টাকায় বিশ্বের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি
পরে বিশাল NFT (নন-ফাঞ্জিবল টোকেন)-এর নতুন জগতে প্রবেশ করেন এবং প্রথম ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে NFT তৈরি করে সফলভাবে বিক্রি করেন। সেই NFT বিক্রির টাকা দিয়েই তিনি তাঁর প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি ‘ইলম’ (Ilm)-এর চিত্রনাট্য লেখা, প্রযোজনা এবং পরিচালনার কাজ করেন। এই ছবিটিই হল বিশ্বের প্রথম সিনেমা, যার পুরো খরচ NFT বিক্রির অর্থ থেকে এসেছে।
বিশাল মালহোত্রা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা জানান—দীর্ঘ ছয় বছর ধরে টয়লেট ক্লিনার ব্র্যান্ড ‘হারপিক’-এর মুখ হওয়া। তিনি বলেন, এর সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল, আগে মানুষ তাঁকে কেবল তাঁর চরিত্রের নাম, যেমন ‘মাম্বো’, ‘জান্নাত ফিল্ম’ বা ‘ভিকি ভেতাল’ নামে চিনত। কিন্তু ছয় বছর ধরে হারপিক-এর বিজ্ঞাপনে তিনি নিজের নাম বিশাল মালহোত্রা বলে পরিচয় দেন। এর ফলে মানুষ তাঁকে তাঁর নিজের নামে চিনতে শুরু করে, যা তাঁকে একজন ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছে।