কিংবদন্তি অসমীয়া শিল্পী জুবিন গর্গকে অকালে হারানোর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি গোটা অসম, এমনকি কলকাতাতেও তাঁর অগণিত ভক্ত। এই শহরে জুবিনের স্মৃতিতে নানা সময়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন অনুরাগীরা। এমনই এক বিশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছেন সুরকার দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় (টুনাই)।
দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় শুধু জুবিনের ভক্ত নন, তিনি ছিলেন কিংবদন্তি শিল্পীর দীর্ঘ ১৬ বছরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহকর্মী। বন্ধুর স্মৃতিকে অম্লান রাখতে আগামী ২৮ অক্টোবর তিনি এক বিশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।
প্রকাশ পাবে ১৬টি অপ্রকাশিত গান
দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় (টুনাই) জানিয়েছেন, এই অনুষ্ঠানে জুবিন গর্গের অপ্রকাশিত দুটি নতুন গান মুক্তি পাবে। এরপর একে একে বিভিন্ন সময়ে তাঁর কণ্ঠে মোট ১৪টি অপ্রকাশিত গান মুক্তি পাবে। দীর্ঘ ১৬ বছরের বন্ধুত্বে তৈরি হওয়া এই ১৬টি গানই এবার শ্রোতাদের সামনে নিয়ে আসবেন দেবাশিস।
ইটিভি ভারতের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে দেবাশিস বলেন, “আগামী এক বছর ওঁর কণ্ঠ আমি থামতে দেব না। এটাই আমার অঙ্গীকার।” তাঁর কাছে এই ১৬টি গানই “ফিনিক্স পাখির মতো”, যা এবার মুক্ত হতে চলেছে। তিনি আক্ষেপ করেন, জুবিন এই গানগুলো দেখে যেতে পারলেন না। এই গানগুলো জনসমক্ষে আনার দায়িত্ব এখন তাঁর। এই কাজে তিনি পাশে পেয়েছেন বন্ধু জুলফিকর রাসেলকে, যিনি গানগুলির গীতিকার।
জুবিন ছিলেন ‘ভগবান মানুষ’
জুবিনের সঙ্গে প্রথম আলাপ প্রসঙ্গে দেবাশিস জানান, তাঁদের প্রথম দেখা হয়েছিল রেইনবো স্টুডিয়োতে, যখন জুবিন দুটি ফিল্মের গান গাইতে এসেছিলেন। বন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দেবাশিস আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, “জুবিন অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছেন। আসলে ভগবান তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করেই এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। ওর লড়াই ছিল মানুষের জন্য, মানুষকে কীভাবে ভালো রাখা যায় তার জন্য।”
তিনি আরও বলেন, “কেউ খেতে না পেলে তাকে দেখার লড়াই চালিয়েছেন জুবিন। পথশিশুকে তুলে এনে তাকে মানুষ করার লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন চিরকাল। জুবিন কোনো সাধারণ মানুষ নয়। জুবিন ভগবান মানুষ।”
দেবাশিস ব্যক্তিগত জীবনে জুবিনের মানবিক দিকটি তুলে ধরে বলেন, তাঁর বাবার অসুস্থতার সময়ে জুবিন তাঁকে গিটার বাজিয়ে গান শুনিয়ে মানসিকভাবে শান্ত করার চেষ্টা করতেন।
‘জাস্টিস ফর জুবিন’
জুবিনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “জুবিনের মৃত্যুটা স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক, সেই ব্যাপারে আমি যেহেতু কিছু জানি না, তাই কোনও কথা বলব না।” তবে তিনি শুধু একটি কথা উল্লেখ করেন: জুবিনের বাঁচার ইচ্ছা ছিল সাংঘাতিক। শেষ করেন এক বিশেষ মন্তব্যের মাধ্যমে— “জাস্টিস ফর জুবিন।”
জুবিনের বলে যাওয়া একটি কথা আজও দেবাশিসের মনে গেঁথে আছে। বাবার অসুস্থতার সময়ে গিটার বাজাতে বাজাতে জুবিন বলেছিলেন, “কোনও কিছুই চিরদিনের নয়। থেমে যাবে, কিন্তু থেকে যাবে।” এই লাইনটিই যেন এখন তাঁর বন্ধুর অপ্রকাশিত গানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার অনুপ্রেরণা।