“আমার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে, কেউ টাকা দেবেন না”—ফেসবুকে এমন পোস্ট এখন প্রায়ই চোখে পড়ে। সুজন রায় বা সোয়েব শামিমের (নাম পরিবর্তিত) মতো অনেক ব্যবহারকারীই দাবি করছেন তাঁদের প্রোফাইল হ্যাক হয়েছে। কিন্তু আদেও কি ফেসবুক হ্যাক করা এত সহজ? এই বিষয়ে ‘ইটিভি ভারত’-এর তরফে সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ ও ‘ইন্ডিয়ান স্কুল অফ অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর কর্ণধার সন্দীপ সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, যা হচ্ছে তাকে প্রযুক্তিগতভাবে ‘হ্যাকিং’ বলা যায় না। এটি মূলত ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অসাবধানতা।
সিকিউরিটি ব্রিচ বনাম পাসওয়ার্ড ব্রেক: সন্দীপবাবু জানান, ফেসবুকে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দু’ধরনের হয়। একটি হলো ডেটা ব্রিচ (Data Breach) বা সিস্টেম কম্প্রোমাইজড হওয়া এবং দ্বিতীয়টি হলো পাসওয়ার্ড ব্রেক (Password Break)।
ডেটা ব্রিচ কী? এটি একটি উচ্চপর্যায়ের আনঅথোরাইজড অ্যাকসেস। হ্যাকাররা কোডিং ও সিকিউরিটি ফ্রেমওয়ার্ক বাইপাস করে ফেসবুকের সার্ভারে ঢুকে মিলিয়ন মিলিয়ন ইউজারের নাম, ফোন নম্বর, ইমেল আইডি ও জন্ম তারিখ চুরি করে ডার্ক ওয়েব-এ বিক্রি করে দেয়। ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একাধিকবার ফেসবুকের বড় বড় ডেটা ব্রিচ হয়েছে, যার মধ্যে সবথেকে চর্চিত ছিল ‘কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’ কেলেঙ্কারি।
পাসওয়ার্ড ব্রেক বা ফিশিং: এর জন্য কোনও সিকিউরিটি ফ্রেমওয়ার্ক জানার প্রয়োজন নেই। হ্যাকাররা ভুয়ো লিঙ্ক বা ওয়েবসাইট তৈরি করে ফাঁদ পাতে। ব্যবহারকারী সেই লিঙ্কে ক্লিক করে নিজের আইডি-পাসওয়ার্ড দিয়ে দিলেই অ্যাকাউন্ট অন্যের দখলে চলে যায়। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যে হ্যাকিংয়ের কথা শোনা যায়, তা আসলে এই ফিশিং বা সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফল।
বিশেষজ্ঞের সতর্কবার্তা: সুজন বা সোয়েবের মতো ঘটনাগুলো আসলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের ত্রুটি নয়, বরং ব্যবহারকারীর নিজস্ব ভুল। ভুয়ো লিঙ্কে ক্লিক করা বা সাধারণ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাই বিপদের কারণ। সুতরাং, হ্যাকিংয়ের আতঙ্ক না ছড়িয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তার প্রাথমিক নিয়মগুলো মেনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।