পদ্মাপাড়ের বাংলাদেশে অস্থিরতা ও কট্টরপন্থার গ্রাসে শিল্প-সংস্কৃতির অবক্ষয় দেখে এবার চরম সিদ্ধান্ত নিলেন প্রয়াত উস্তাদ রশিদ খানের সুযোগ্য পুত্র তথা তরুণ উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী আরমান খান। সাফ জানিয়ে দিলেন, জীবনে কোনওদিন বাংলাদেশে অনুষ্ঠান করতে যাবেন না তিনি। সম্প্রতি এক একান্ত সাক্ষাৎকারে আরমান তাঁর এই অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
পরিচয় লুকিয়ে ফিরতে হয়েছে সঙ্গীকে: আরমান জানান, ৯ দিনের সফরে তাঁর তিনটি অনুষ্ঠান করার কথা ছিল ঢাকা ও চট্টগ্রামে। কিন্তু সেখানে যেভাবে শিল্প ও সঙ্গীত আক্রান্ত হচ্ছে, তাতে তিনি মর্মাহত। আরমানের সঙ্গী সিরাজকে বাংলাদেশ থেকে নিজের পরিচয় লুকিয়ে ‘বাংলাদেশি’ সেজে ফিরতে হয়েছে। আরমান প্রশ্ন তোলেন, “ভারতীয় হয়ে নিজের পরিচয় লুকিয়ে ফিরতে হচ্ছে, এর থেকে লজ্জার আর কী আছে?”
মৌলবাদীদের পালটা জবাব: বাংলাদেশ নিয়ে সরব হওয়ায় সেখানকার কিছু কট্টরপন্থী তাঁকে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার হুমকি দিচ্ছে। এর জবাবে আরমান বলেন, “কোরান বা গীতা—কোনও ধর্মেই মানুষকে মারতে বলা হয়নি। যারা এই ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে তারা আসল মুসলমান নয়।” তিনি আরও যোগ করেন, আমেরিকায় কোরান অবমাননা হলে কেউ গর্জে ওঠে না কেন? এমনকি ওড়িশায় সান্তার টুপি বিক্রেতাদের ওপর হামলা বা দিল্লিতে কুস্তিগীরদের নিগ্রহ নিয়েও সমানভাবে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি।
বাবার শিক্ষা ও সংস্কৃতির অপমান: স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আরমান বলেন, “বাবা বলতেন গানবাজনা আমাদের কাছে পুজো। অথচ বাংলাদেশে বাদ্যযন্ত্র মাটিতে আছড়ে ভাঙা হচ্ছে, ‘ছায়ানট’ পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাদ্যযন্ত্র দেবী সরস্বতীর জিনিস, তাকে অপমান করার অধিকার কারও নেই।” বাবার কাছে ১৮ বছর বয়সের আগে মঞ্চে ওঠার অনুমতি পাননি আরমান। সেই কঠিন সাধনার পরম্পরা বহনকারী শিল্পী আজ বিদেশের মাটিতে শিল্পের অপমানে ব্যথিত। আরমান স্পষ্ট জানিয়েছেন, যে দেশে শিল্পের সম্মান নেই, সেই দেশ থেকে তিনি সারা জীবনে একটি টাকাও রোজগার করবেন না।