একজন মানুষ তখনই সম্পূর্ণ সুস্থ যখন তিনি মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে এবং সামাজিকভাবে ফিট থাকেন। আমরা শারীরিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বকে উপেক্ষা করি। অথচ মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া মানেই নিজের প্রতি প্রথম দায়িত্ব পালন করা।
শারীরিক স্বাস্থ্য মূলত দুটি স্তম্ভের উপর নির্ভরশীল—সুষম আহার এবং নিয়মিত শরীরচর্চা। পর্যাপ্ত ঘুমও এর গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। অন্যদিকে, মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের আবেগ, সামাজিক সম্পর্ক এবং মানসিক স্থিতিশীলতাকে বোঝায়। এটি আমাদের চিন্তাভাবনা, আচরণ এবং অনুভূতিকে সরাসরি প্রভাবিত করে।
মন এবং শরীর একে অপরের সাথে গভীরভাবে যুক্ত। খুব কম ক্ষেত্রেই তারা আলাদাভাবে কাজ করে। তাই সুস্থ থাকতে হলে মন ও শরীরের যত্ন একইসাথে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকেও দুর্বল করে তোলে।
মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু বিশেষ খাবার মনকে সতেজ রাখতে এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক সেই খাবারগুলো কী:
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার: আখরোট, ফ্ল্যাক্স সিড এবং তৈলাক্ত মাছ যেমন সার্ডিন, স্যামন ও ক্যানোলা তেল মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এগুলোতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার: দই, বাটার মিল্ক এবং ঘরে তৈরি আচার অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতার সাথে সরাসরি যুক্ত। সুস্থ অন্ত্র মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
দানাশস্য: বাদামি চাল, ওটমিল, বাজরা এবং গম শরীরে ধীরে ধীরে শক্তি যোগায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার: বেরি, সবুজ শাকসবজি, ডার্ক চকোলেট, আদা এবং হলুদ শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা মস্তিষ্কের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ডি: সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর প্রধান উৎস। এছাড়াও মাশরুম, ডিমের কুসুম এবং স্যামন মাছেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। ভিটামিন ডি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সহায়ক।
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: ডার্ক চকোলেট, কলা, কাজু, বাদাম এবং মটরশুঁটিতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে। ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ু এবং পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে, যা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। কারণ মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হলে তা ধীরে ধীরে শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলতে শুরু করে। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রতিদিন রাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করাও জরুরি। মনে রাখবেন, একটি সুস্থ মনই একটি সুস্থ জীবনের ভিত্তি স্থাপন করে।