কলকাতা পুরসভার শুক্রবারের অধিবেশন সাক্ষী থাকল এক নজিরবিহীন উত্তেজনার। রবীন্দ্রনাথ-বঙ্কিমচন্দ্রকে নিয়ে একটি নিন্দা প্রস্তাব ঘিরে শুরু হওয়া বিতর্ক শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গেল ব্যক্তিগত আক্রমণ ও পদত্যাগের চ্যালেঞ্জে। বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের ‘মিনি পাকিস্তান’ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ঘোষণা করলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি কেবল মেয়র পদ নয়, রাজনীতিই ছেড়ে দেবেন।
বিতর্কের সূত্রপাত কোথায়? তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের ওপর ‘সাংস্কৃতিক আক্রমণ’-এর প্রতিবাদে একটি নিন্দা প্রস্তাব আনেন। এর বিরোধিতা করতে গিয়ে বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ ও মেয়র ফিরহাদ হাকিমের মধ্যে পুরনো ইতিহাসের তর্কা-তর্কি শুরু হয়। ফিরহাদ হাকিম বলেন, “পাকিস্তান চাওয়ার প্রশ্নে হিন্দু মহাসভা ফজলুল হকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল।” এই মন্তব্যের পরই পাল্টা তোপ দাগেন সজল ঘোষ।
“পাকিস্তান আমার শত্রু”: কড়া বার্তা মেয়রের
সজল ঘোষ অভিযোগ করেন যে, মেয়র ফিরহাদ হাকিমই কলকাতার একটি অংশকে ‘মিনি পাকিস্তান’ বলেছিলেন। এই কথা শোনামাত্রই মেজাজ হারান মেয়র। সভার মধ্যেই আঙুল উঁচিয়ে তিনি চ্যালেঞ্জ ছোঁড়েন:
ভিডিও দেখান: “যদি কেউ এমন একটি ভিডিও বা রেকর্ড দেখাতে পারেন যেখানে আমি ‘মিনি পাকিস্তান’ বলেছি, তবে আজই মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেব।”
দেশপ্রেমের সওয়াল: ফিরহাদ বলেন, “আমি মুসলমান হতে পারি, কিন্তু আমার দেশ ভারত। পাকিস্তান আমার শত্রু।”
রাজনীতি ত্যাগের ঘোষণা: অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানান, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি বরাবরের মতো রাজনীতি থেকে বিদায় নেবেন।
‘গল্পের গরু গাছে তোলা হচ্ছে’
পাকিস্তানের সংবাদপত্রে তাঁর সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়া সংক্রান্ত জল্পনাকেও এদিন উড়িয়ে দিয়েছেন মেয়র। তিনি রসিকতার সুরে বলেন, “আমি উর্দু পড়তে জানি না, বাংলায় পাকিস্তানের কাগজও আসে না। এসব গল্পের গরু গাছে তোলার মতো ব্যাপার।” ফিরহাদের দাবি, বাংলার সম্প্রীতির রাজনীতিতে এই ধরনের সাম্প্রদায়িক আক্রমণ আগে কখনও দেখা যায়নি।
পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল যে, তৃণমূল কাউন্সিলর দেবাশিস কুমারকে আসন ছেড়ে গিয়ে মেয়রকে শান্ত করতে হয়। এদিন পুরসভার অন্দরে বিজেপি বনাম তৃণমূলের এই সংঘাত বুঝিয়ে দিল, আগামী দিনে কলকাতার রাজনীতিতে এই ‘পাকিস্তান’ বিতর্ক আরও চরম আকার নিতে চলেছে।