বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখ এবং ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি আর নেই। বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টনে প্রকাশ্য দিবালোকে আততায়ীদের গুলিতে জখম হয়েছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই ওপার বাংলা জুড়ে শুরু হয়েছে চরম অরাজকতা ও সহিংসতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
বিতর্কিত উত্থান ও ইনকিলাব মঞ্চের প্রভাব শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে দ্রুত উত্থান ঘটেছিল ওসমান হাদির। ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর মাধ্যমে আওয়ামি লিগের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবি এবং ভারত-বিরোধী কঠোর অবস্থানের জন্য তিনি তরুণ প্রজন্মের একাংশের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তবে সম্প্রতি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে তাঁর ছড়ানো ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’-এর মানচিত্র ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। আসন্ন নির্বাচনে ঢাকার ৮ নম্বর কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ছিলেন তিনি।
এক নজরে ঘটনাক্রম: পল্টন থেকে সিঙ্গাপুর
১২ ডিসেম্বর: পল্টনের কালভার্ট রোডে অটো-রিকশায় যাওয়ার সময় গুলিতে বিদ্ধ হন হাদি।
১৫ ডিসেম্বর: উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৯ ডিসেম্বর: মস্তিষ্কে অপূরণীয় ক্ষতি এবং মাল্টি-অর্গান ফেলিওরের কারণে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
প্রতিবাদের আগুনে পুড়ছে ঢাকা, নিশানায় সংবাদপত্র ও দূতাবাস
হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে চরম অশান্তি শুরু হয়েছে। ইনকিলাব মঞ্চের নেত্রী ফাতিমা তাসনিম জুমা হাদিকে ‘শহিদ’ আখ্যা দেওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
সংবাদমাধ্যমে হামলা: ঢাকার শীর্ষ সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ এবং ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায় উত্তেজিত জনতা।
ভারতীয় দূতাবাসে হামলা: চট্টগ্রামে ভারতীয় উপ-হাইকমিশনারের বাসভবন লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়।
রাজনৈতিক দপ্তরে আগুন: রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন ও আওয়ামি লিগের কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রশাসনের তৎপরতা ও রাষ্ট্রীয় শোক
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে হাদির মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেন এবং একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি তুলে রাস্তায় নেমেছে কয়েক হাজার পড়ুয়া। পুলিশ মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে এবং অভিযুক্তকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে।