সংসদের ভিতরে ও বাইরে এখন রণক্ষেত্রের চেহারা। মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট (MGNREGA) বা ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের জায়গায় নতুন আইন ‘জি র্যাম জি’ (G RAM G) আনতে গিয়ে প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়ল মোদী সরকার। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজ্যসভায় ধ্বনিভোটে এই বিল পাশ হলেও, বিরোধী শিবিরের ক্ষোভ কার্যত আগ্নেয়গিরির আকার নিয়েছে।
‘গরিবকে আবার দাস বানানোর ছক’— গর্জে উঠলেন খাড়গে
রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে যে ভাষায় সরকারকে আক্রমণ করেছেন, তা সাম্প্রতিককালে বিরল। আবেগতাড়িত হয়ে তিনি বলেন:
“এই আইন তুলে দিলে মানুষ আপনাদের রাস্তায় হাঁটতে দেবে না। গরিবের অধিকার কেড়ে নিয়ে তাঁদের আবার দাসত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার।”
পরিসংখ্যান টেনে তিনি দেখান, ২০২০-২১ সালে যেখানে বরাদ্দ ছিল ১.১১ লক্ষ কোটি টাকা, তা কমিয়ে ৮৬ হাজার কোটি করা হয়েছে।
বিজেপির উদ্দেশে তাঁর কড়া তোপ— “মুখে রাম, বগলে ছুরি! এটাই আপনাদের আসল রূপ।”
মাঝরাতে পাশ বিল, বিরোধীদের ওয়াকআউট
লোকসভায় দুপুরে পাশের পর রাজ্যসভায় বিতর্ক চলে রাত ১২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত। বিরোধীরা বিলটি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঠানোর দাবি জানালেও সরকার তা মানেনি। প্রতিবাদে তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিরোধী জোটের সাংসদরা সংসদ চত্বরে ধরনায় বসেন। তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন বিলটিকে “জমিদারি মানসিকতার ফল” বলে কটাক্ষ করেছেন।
বাংলায় ইতি এমজিএনরেগা-র, বিকল্প পথে মমতা
লোকসভায় বিল পাশের কয়েক মিনিটের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে এমজিএনরেগা বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই নিজের বিকল্প পথ বেছে নিয়েছেন। রাজ্য সরকারের নিজস্ব ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী বছর ১০০ দিনের কাজ নিশ্চিত করা হবে। যার নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘মহাত্মশ্রী’।
কী আছে এই নতুন G RAM G বিলে?
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের দাবি, এই নতুন আইন অনেক বেশি স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত।
কাজের গ্যারান্টি: ১০০ দিন থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২৫ দিন।
কাজের ক্ষেত্র: জল সুরক্ষা, গ্রামীণ পরিকাঠামো, জীবিকা ও জলবায়ু সহনশীলতা— এই চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে কাজকে।
বিতর্ক: বিরোধীদের দাবি, এতে মানুষের চাহিদার বদলে প্রশাসনের মর্জিমতো কাজ হবে, যা সাধারণ শ্রমিকের অধিকার ক্ষুণ্ণ করবে।