উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে এক অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী ও তাঁর স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। নিখোঁজ দম্পতির খোঁজ করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, তাঁদের নিজের ছেলে অম্বেশই (Ambesh) বাবা-মাকে খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বিবাদের মূলে ভিনধর্মী বিয়ে ও খোরপোশ
তদন্তে উঠে এসেছে এক জটিল পারিবারিক কলহের কাহিনী:
বিয়ে নিয়ে অশান্তি: প্রায় পাঁচ বছর আগে জনৈক মুসলিম মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন অম্বেশ। কিন্তু তাঁর বাবা শ্যাম বাহাদুর ও মা ববিতা এই বিয়ে মানতে চাননি।
টাকার দাবি: পরিস্থিতির চাপে অম্বেশ তাঁর স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে চাইলে স্ত্রী ৫ লক্ষ টাকা খোরপোশ দাবি করেন। এই টাকা জোগাড় করতে বাবার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন অম্বেশ।
খুনের রাতে কী ঘটেছিল? গত ৮ ডিসেম্বর টাকা দেওয়া নিয়ে বিবাদ চরম আকার নেয়। রাগের মাথায় অম্বেশ তাঁর মা ববিতাকে শিল-নোড়া (Grinding stone) দিয়ে আঘাত করে। চিৎকার শুনে বাবা শ্যাম বাহাদুর বাঁচাতে এলে তাঁকেও মাথায় আঘাত করে খুন করে অম্বেশ।
খুনের পর প্রমাণ লোপাট করতে অম্বেশ গ্যারাজ থেকে করাত (Saw) নিয়ে আসে। বাবা ও মায়ের দেহ মোট ৬টি টুকরোয় কাটে সে। এরপর সেই দেহাংশগুলো বস্তায় ভরে গাড়ির ডিকিতে করে নিয়ে গিয়ে ভোরে নদীতে ফেলে দেয়।
খুনের পর পুলিশের নজর ঘোরাতে ১৩ ডিসেম্বর অম্বেশের দিদি বন্দনা থানায় ডায়েরি করেন। অম্বেশ দিদিকে মিথ্যে বলেছিল যে, ঝগড়া করে বাবা-মা বাড়ি থেকে চলে গিয়েছেন এবং সে তাঁদের খুঁজতে বেরিয়েছি। এরপরই সে ফোন বন্ধ করে দেয়। এই রহস্যজনক আচরণেই পুলিশের সন্দেহ দানা বাঁধে।
প্রায় এক সপ্তাহ পর পুলিশ অম্বেশকে জালে তোলে। কড়া জেরার মুখে সে নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আয়ুষ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন:
খুনে ব্যবহৃত শিল-নোড়া ও করাত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
নদীর জলে ডুবুরি নামিয়ে বাকি দেহাংশের তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই শ্যাম বাহাদুরের দেহের একাংশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পারিবারিক মান-মর্যাদা আর অর্থের লালসা কীভাবে একজন উচ্চশিক্ষিত যুবককে খুনিতে পরিণত করল, তা ভেবেই শিউরে উঠছে এলাকাবাসী।