অনেকেই মাঝরাতে বা ভোরে প্রবল জল পিপাসায় জেগে ওঠেন। মনে হয় যেন গলা ও মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। অনেকেই একে সাধারণ গরম বা তৃষ্ণা ভেবে জল খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, এই সমস্যাটিকে মোটেও হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। নিয়মিত যদি রাতে এমন অনুভব করেন, তবে তা আপনার শরীরে লুকিয়ে থাকা কোনো জটিল রোগের আগাম লক্ষণ হতে পারে।
কোন কোন রোগের সঙ্কেত দিচ্ছে শুকনো গলা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে রাতে গলা শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়:
-
ডায়াবেটিস (সুগার): রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যায়, যার অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো ঘন ঘন মুখ ও গলা শুকিয়ে আসা।
-
উচ্চ রক্তচাপ (High BP): হাই প্রেসারের রোগীদের রাতে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে, যার ফলে শরীরে জলের ঘাটতি তৈরি হয় এবং গলা শুকিয়ে যায়।
-
হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট: হাঁপানির রোগীরা ঘুমের ঘোরে নাকের বদলে মুখ দিয়ে শ্বাস নেন। এতে মুখের লালা দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং তীব্র পিপাসা অনুভব হয়।
-
হৃদরোগ: ধূমপায়ী বা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় হার্টের সমস্যার কারণে শরীরের ফ্লুইড ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটে।
-
অবসাদ ও স্নায়ুরোগ: যারা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অবসাদ (Depression) বা নার্ভের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের লালা গ্রন্থি অনেক সময় সঠিকভাবে কাজ করে না।
উপশমের সহজ ঘরোয়া উপায় ও পরামর্শ:
চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি জীবনযাত্রায় এই পরিবর্তনগুলো আনলে আপনি দ্রুত আরাম পেতে পারেন:
-
ধূমপান ত্যাগ করুন: ধূমপান সরাসরি মুখ ও গলাকে শুষ্ক করে ফেলে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এটি বর্জন করাই শ্রেয়।
-
গরম জলের ভাপ (Inhalation): নাক বন্ধ থাকার কারণে যদি মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হয়, তবে শোবার আগে গরম জলের ভাপ নিন। এতে সাইনাস পরিষ্কার হবে এবং মুখ শুকাবে না।
-
পর্যাপ্ত উষ্ণ জল: সারাদিনে অন্তত ৩-৪ লিটার জল পান করুন। তবে রাতে বার বার গলা শুকানোর সমস্যা থাকলে ইষদুষ্ণ জল পান করা বেশি কার্যকর।
-
উষ্ণ পানীয়: খুব বেশি কষ্ট হলে আদা চা বা লিকার চা সাময়িক উপশম দিতে পারে।
সম্পাদকের শেষ কথা: শরীর যখন কোনো সংকেত দেয়, তখন তা গুরুত্বের সাথে নেওয়া উচিত। যদি ঘরোয়া উপায়েও সমস্যা না কমে, তবে দেরি না করে ব্লাড সুগার এবং রক্তচাপ পরীক্ষা করিয়ে নিন।