অ্যালোপ্যাথি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সাধারণ মানুষ ওয়াকিবহাল। তবে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যার কারণে শরীরে সবচেয়ে বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। কিন্তু এবার শোনা গেল এক নতুন তথ্য। সম্প্রতি জাতীয় স্তরের একটি সমীক্ষা বলছে, আয়ুর্বেদিক ওষুধও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত নয়!
লোকাল সার্কলস নামক একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সম্প্রতি ১৭ হাজার ব্যক্তির উপর একটি বিস্তৃত গবেষণা চালিয়েছে। ৩০৩টি ভারতীয় জেলাব্যাপী এই সমীক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা জানা। এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শুধু অ্যালোপ্যাথি নয়, আয়ুর্বেদিক ওষুধ সেবনের পরেও বেশ কিছু প্রতিক্রিয়া অনুভব করেছেন মানুষ।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মতামতের ভিত্তিতে জানা গেছে, অ্যালোপ্যাথি হোক বা আয়ুর্বেদিক, প্রতি দু’জন ব্যক্তির মধ্যে অন্তত একজন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগেছেন। এমনকি, এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে কিছু বেশ গুরুতরও ছিল বলে জানিয়েছেন অনেকে। পরিসংখ্যান বলছে, অন্তত ৪২ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার।
তবে, অ্যালোপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধের তুলনায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার হোমিওপ্যাথিতে অনেকটাই কম বলে দাবি করেছে লোকাল সার্কলের এই গবেষণা। তাদের তথ্য অনুযায়ী, হোমিওপ্যাথি ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার মাত্র ২৪ শতাংশ। সমীক্ষকদের মতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো তেমন গুরুতর হয় না। অন্যদিকে, আয়ুর্বেদিক ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার ৩৭ শতাংশ, যা হোমিওপ্যাথির তুলনায় বেশ বেশি।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি রাজীব জয়দেবন এই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পশ্চিমা দেশগুলিতে অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে গেলে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন বাধ্যতামূলক। শরীরের ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংসকারী বা তাদের বৃদ্ধি রোধকারী এই ওষুধগুলি প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেউ কিনতে পারেন না। কিন্তু ভারতে প্রায়শই এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়।
রাজীবের মতে, ভারতে অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিকের মতো ওষুধ কিনে নেন। এর ফলে যথেচ্ছ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তবে কিছুটা স্বস্তির খবর এই যে, বেশিরভাগ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তেমন গুরুতর হয় না, ফলে শরীরের খুব বেশি অসুবিধা হয় না।
এই সমীক্ষা অ্যালোপ্যাথি ওষুধের পাশাপাশি আয়ুর্বেদিক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়েও নতুন করে চিন্তাভাবনার অবকাশ সৃষ্টি করল। যদিও আয়ুর্বেদিক ওষুধকে সাধারণত নিরাপদ মনে করা হয়, এই গবেষণা সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অন্য কথাই বলছে।