জঙ্গলমহল জুড়ে খাবারের খোঁজে লোকালয়ে হাতির তাণ্ডব এবং এর ফলে বিঘের পর বিঘে ফসলের ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনা নতুন ছিল না। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার ঝাড়গ্রামের জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় হাতির আক্রমণের সংখ্যা প্রায় ৯৫ শতাংশ কমে এসেছে, যা এক বিশাল সাফল্য।
বন দফতর থেকে পাওয়া তথ্যে স্পষ্ট, চলতি ২০২৪-২০২৫ মরশুমে হাতির আক্রমণে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫-৮ হেক্টর, যেখানে ২০২৩-২০২৪ মরশুমে এই ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৫-৫০ হেক্টর।
মৃত্যু ও আক্রমণের সংখ্যায় নজিরবিহীন পতন
হাতির লোকালয়ে আসা কমার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ওপর আক্রমণের সংখ্যাও কমেছে নাটকীয়ভাবে। বিগত বছরে এই আক্রমণের সংখ্যা ছিল ১৫টিরও বেশি, যা এবার কমে হয়েছে মাত্র ৪টি। ফলস্বরূপ, হাতির আক্রমণে ফসল নষ্ট হওয়ার মাত্রা যেমন কমেছে, তেমনই কমেছে প্রাণহানির ঝুঁকিও।
এর ফলে ঝাড়গ্রামের জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলির বাসিন্দারা, বিশেষ করে লোধাশুলি রেঞ্জের পেনিয়াভাঙ্গা, ন্যাকড়াবিন্দা এবং ঝাড়গ্রাম রেঞ্জের বড়িয়া, জোয়ালভাঙ্গার মতো প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষ, এখন ভয়ের বদলে স্বস্তিতে দিন কাটাচ্ছেন। অন্যান্য বছর ধান চাষ করেও লাভের মুখ দেখতে না পাওয়া কৃষকরা এবার ভালো ফলন ঘরে তুলছেন।
AI ক্যামেরা এবং ট্র্যাকার টিমের কামাল
হাতির লোকালয়ে আনাগোনা কমানোর পিছনে রয়েছে বন দফতরের একাধিক কার্যকরী পদক্ষেপ এবং প্রযুক্তির ব্যবহার। বনবিভাগ বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে এই সাফল্য এনেছে:
AI ক্যামেরা: হাতির গতিবিধি নজরে রাখতে জঙ্গলমহলে বসানো হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত (AI) ক্যামেরা।
ট্র্যাকার ও রেসপন্স টিম: বাড়ানো হয়েছে ট্র্যাকার টিমের সংখ্যা এবং কুইক রেসপন্স টিম (QRT) গঠন করা হয়েছে।
নজরদারি ও সমন্বয়: বেড়েছে নজরদারি যানের সংখ্যা। বন সুরক্ষা কমিটির সঙ্গে সমন্বয়ও জোরদার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বনাঞ্চল বৃদ্ধির ফলে হাতির দল জঙ্গলের মধ্যেই পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে। সবমিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ও সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ লোকালয়ে হাতির হানা কমে আসায় জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের জীবনে ফিরেছে স্বস্তি।