ঘূর্ণিঝড় ‘দিতওয়া’-র তাণ্ডবে কার্যত ছারখার হয়ে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেসরকারি মতে ইতিমধ্যেই ৪৫৫ ছাড়িয়েছে, এবং দ্বীপরাষ্ট্রের বড় অংশ জলমগ্ন। এমন চরম সঙ্কটের মধ্যে শ্রীলঙ্কার জন্য পাকিস্তান থেকে পাঠানো ত্রাণসামগ্রী নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় বিতর্ক। অভিযোগ, পাকিস্তানের পাঠানো চিকিৎসা সামগ্রী, খাবারের প্যাকেট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বহু কার্টন মেয়াদোত্তীর্ণ (Expired) বা ব্যবহারের অযোগ্য অবস্থায় কলম্বোয় পৌঁছেছে।
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার।
কূটনৈতিক চ্যানেলে অসন্তোষ
ত্রাণসামগ্রীর চালান কলম্বোয় পৌঁছনোর পর লঙ্কার আধিকারিকদের চোখে বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপরেই শ্রীলঙ্কার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং বিদেশ মন্ত্রক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কলম্বো আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ইসলামাবাদের কাছে তাদের তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। শ্রীলঙ্কার আধিকারিকেরা বলছেন, এই ঘটনায় পাকিস্তানের মানবিক সহায়তার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, বিশেষ করে যখন দেশটি সঙ্কট-পরবর্তী পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য লড়াই করছে।
নেপাল কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি: ক্ষোভে ফুঁসছে নাগরিক সমাজ
পাকিস্তানের ত্রাণ কূটনীতির সমালোচনা এই প্রথম নয়। ২০১৫ সালে নেপালের ভূমিকম্পের সময় হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে গোমাংসের তৈরি খাবার পাঠানোর পর ইসলামাবাদ সাংস্কৃতিক অসংবেদনশীলতার অভিযোগের মুখে পড়েছিল।
সাম্প্রতিক বিতর্ক শ্রীলঙ্কার নাগরিক সমাজের গোষ্ঠী এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বহু ইউজার মেয়াদোত্তীর্ণ ত্রাণ পাঠানোর ঘটনাটিকে ‘চরম অপমান’ এবং সহায়তা কূটনীতির একটি ‘তামাশা’ বলে অভিহিত করেছেন। অনেকে সরকারের কাছে পাকিস্তানের কাছ থেকে কড়া জবাবদিহি দাবি করার আহ্বান জানিয়েছেন।
পরিদর্শন প্রোটোকল কঠোর করছে কলম্বো
শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমারা দিশানায়েক এই দুর্যোগকে “আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং প্রাকৃতিক দুর্যোগ” বলে অভিহিত করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। কলম্বোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ঘটনার পরে সব আগত ত্রাণ চালানের পরিদর্শন প্রোটোকল কঠোর করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে সেই সব দেশ থেকে আসা সাহায্যের ক্ষেত্রে, যাদের বিরুদ্ধে অনুপযুক্ত বা নিম্নমানের সাহায্য পাঠানোর ইতিহাস রয়েছে।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় দিতওয়ার কারণে শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ থাইল্যান্ড এবং উত্তর মালয়েশিয়া-সহ মোট চারটি দেশে প্রায় ১,২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।