মহানায়ক হয়ে ওঠার অনেক আগেই মা-বাবার কথায় গৌরী দেবীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন উত্তম কুমার। তাঁদের বিয়ের জাঁকজমক বা আয়োজনে কোনো ত্রুটি হতে দেননি তাঁর আত্মীয় পরিজনেরা। বিশেষ করে ভাই তরুণ কুমার দাদার বিয়ের প্রায় সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। তরুণ কুমার তাঁর লেখা ‘আমার দাদা উত্তম কুমার’ বইতে মহানায়কের বিয়ের নানা মজার ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন। যার মধ্যে গৌরী দেবী তাঁকে যে গোপন কথাটি জানিয়েছিলেন, সেটি সবচেয়ে আকর্ষণীয়।
ফুলশয্যার রাতে রসিকতা:
গৌরীদেবীর সঙ্গে তরুণ কুমারের সম্পর্ক প্রথম থেকেই খুব বন্ধুত্বপূর্ণ ও স্নেহের ছিল। গৌরীদেবী তরুণ কুমারকে মাঝে মাঝেই তাঁর জীবনের নানা কথা শেয়ার করতেন। তেমনই এক প্রসঙ্গে তিনি ফাঁস করেছিলেন ফুলশয্যার রাতের একটি বিশেষ ঘটনা।
যে ঘর উত্তম ও গৌরীদেবীর ফুলশয্যার জন্য সাজানো হয়েছিল, সেখানে ট্রাঙ্কের পিছনে লুকিয়ে বসেছিলেন উত্তমের বউদি ও তাঁর এক তুতো বোন। ঘরে ঢোকার পরই গৌরীদেবী ইশারায় উত্তম কুমারকে সেই কথা জানিয়ে দেন। এরপরই ট্রাঙ্কের কাছে গিয়ে উত্তম কুমারের অট্টহাসি! তিনি বোন ও বউদিকে ট্রাঙ্কের পিছন থেকে বার করে সোজা বলে ওঠেন, ”তোমরা আমার ফুলশয্যা দেখবে তো? বেশ, আজ আমি জানলা-দরজা সব খুলে রাখছি।”
উত্তমের মুখে এমন কথা শোনামাত্রই বউদি আর বোন লজ্জায় লাল হয়ে ঘর থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে যান। এই ঘটনার মধ্য দিয়েই উত্তম কুমার যে বরাবরই খুব রসিক মানুষ ছিলেন, তা প্রমাণিত হয়।
গৌরী দেবীকে দেওয়া বিশেষ উপহার:
তবে এর পাশাপাশি উত্তম যে স্বামী হিসেবেও কর্তব্যপরায়ণ, তা গৌরীদেবীকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন প্রথম রাতেই। বিয়ের সময় গৌরীদেবী উত্তমের কাছে একটি বিশেষ জিনিস আবদার করেছিলেন। উত্তম তখন হ্যাঁ বা না কিছুই জানাননি। গৌরীদেবী ভেবেছিলেন, উত্তম হয়তো সেই আবদারটি এড়িয়ে গিয়েছেন।
কিন্তু ফুলশয্যার রাতে তাঁর সমস্ত ভাবনা বদলে গেল। ফুলশয্যার বিছানায় বসে, উত্তম কুমার তাঁর হাতে তুলে দিলেন বানেশ্বর শিব লিঙ্গের একটি রূপো দিয়ে তৈরি “গৌরীপট্ট”। যা কিনা উত্তমের কাছে চেয়েছিলেন গৌরীদেবী। এই গৌরীপট্ট নারী-পুরুষের মিলনের এবং সৃষ্টির প্রতীক। নিজেদের ভালবাসাকে শিব-পাবর্তীর মতো অমর করে তুলতেই গৌরীদেবী এমন উপহার চেয়েছিলেন।