প্রযুক্তির অপব্যবহার কীভাবে মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনতে পারে, তার সাক্ষী রইল দক্ষিণ 24 পরগনার সোনারপুরের এক পরিবার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ব্যবহার করে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কিশোরীর আপত্তিকর ছবি তৈরি করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার অভিযোগ উঠেছে। আর এই চরম অপমানের জেরে শুক্রবার সকালে ঘর থেকে ওই কিশোরীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
বৃহস্পতিবারের ঘটনা
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কিশোরীটি মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করত। বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে ফিরে সে নিজের ঘরে ঢুকে যায়। পরিবারের সদস্যরা পুরো সন্ধ্যা ও রাতে তেমন কিছু অস্বাভাবিকতা বুঝতে পারেননি। রাতে খাওয়া-দাওয়া করে সে নিজের ঘরে যায়। কিন্তু, শুক্রবার সকালে ওই কিশোরী দরজা না-খোলায়, তার মামার বাড়ির লোকজন ডাকাডাকি শুরু করেন। ভিতর থেকে কোনও সাড়াশব্দ না-পেয়ে দরজা ভেঙে ঘরের সিলিং থেকে ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন তাঁরা।
তড়িঘড়ি তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর সোনারপুর থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
পরিবারের অভিযোগ: উত্যক্তকরণ ও AI ছবির ব্যবহার
মৃত ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, আসিফ খান নামে স্থানীয় এক যুবক দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের মেয়েকে উত্যক্ত করছিল। সঙ্গে তার প্রেমিকা খুশিও ছিল। এমনকি খুশি ও তার বন্ধুরা বাড়িতে এসে কিশোরীকে মারধরের চেষ্টাও করে এবং ফোন করেও উত্যক্ত করা হতো। কিন্তু সপ্তাহখানেক আগে আসিফের সঙ্গে ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর কিছু অশ্লীল ছবি AI (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) ব্যবহার করে তৈরি করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে খুশি।
মৃত ছাত্রীর মাসি অভিযোগ করেছেন,
“AI দিয়ে নিজের প্রেমিকের সঙ্গে আমাদের মেয়ের আপত্তিকর ছবি তৈরি করেছিল খুশি। তারপর সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয় সে। এরপর এলাকায় ওর নামে উলটো-পালটা কথা বলে বেড়ায়। লোকজনের কাছে ওকে অপমানিত হতে হয়। সেই অপমানেই এই চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও।”
পুলিশি তদন্ত
পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে সোনারপুর থানায় আসিফ খান ও খুশির বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এ নিয়ে বারুইপুরের এসডিপিও অভিষেক রঞ্জন বলেন, “সোনারপুর থানা এলাকা থেকে আজ সকালে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছাত্রীর মামার বাড়ি থেকে ঝুলন্ত দেহ পাওয়া গিয়েছে। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পরিবারের তরফে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।”