ভারতীয় অর্থনীতির গতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)। আইএমএফ-এর সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে, জিডিপি বৃদ্ধির ধীরগতি এবং ডলারের তুলনায় রুপির তীব্র অবমূল্যায়নের কারণে ভারতের ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে নির্ধারিত সময়সীমার চেয়ে বেশি সময় লাগবে।
ভারত প্রথমে ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে এই মাইলফলক অর্জনের লক্ষ্য রেখেছিল, যা পরে সংশোধন করে ২০২৭-২৮ সাল করা হয়। তবে, আইএমএফ-এর বর্তমান পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভারতীয় অর্থনীতি ২০২৬ অর্থবছরে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে এবং ২০২৮ অর্থবছরে ৪.৯৬ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যা লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হবে। আইএমএফ-এর মতে, ভারতের অর্থনীতি ২০২৯ অর্থবছরের মধ্যে ৫.৪৬ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ২০৩০ সালে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে।
রুপির দুর্বলতা ও জিডিপি-তে প্রভাব
রুপির দুর্বলতা বিশেষভাবে ডলার-নির্ধারিত জিডিপি পরিসংখ্যানের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এই বছর এখন পর্যন্ত ডলারের তুলনায় ভারতীয় মুদ্রার মূল্য ৪.২৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া, নিম্ন মুদ্রাস্ফীতি বর্তমান বাজার মূল্যে গণনা করা নামমাত্র জিডিপির বৃদ্ধিকেও ধীর করে দিয়েছে।
পূর্বতন অর্থ ও অর্থনৈতিক বিষয়ক সচিব সুভাষ চন্দ্র গর্গ সতর্ক করে বলেছেন, লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের সময়সীমা না মানা হলে “ভারতীয় অর্থনীতি নিম্ন-মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকা পড়ার” সম্ভাবনা রয়েছে।
আশ্বাসের দিক ও অস্বস্তি
তা সত্ত্বেও, আশা করা হচ্ছে ভারত এই বছর জাপানকে ছাড়িয়ে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। আইএমএফের পূর্বাভাস অনুসারে, ভারতীয় জিডিপি ২০২৬ অর্থবছরে ৪.১২ ট্রিলিয়ন ডলার ছোঁবে এবং ২০২৫-২৬ সালে ভারতের প্রকৃত জিডিপি ৬.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। আইএমএফ উল্লেখ করেছে যে, জিএসটি (GST)-এর মতো সংস্কারগুলি অর্থনীতিকে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ধাক্কা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
আইএমএফ জানিয়েছে, “ভারতের অর্থনীতি ভালোভাবে কাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬.৫ শতাংশ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পর, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রকৃত জিডিপি ৭.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।”
তবে, সবচেয়ে বড় অস্বস্তির কারণ হল—আইএমএফ-এর বার্ষিক মূল্যায়নে ভারতের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস ডেটাকে ‘সি’ গ্রেড দেওয়া হয়েছে। চারটি গ্রেডের মধ্যে এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। এর অর্থ, এই তথ্যগুলিতে এমন কিছু মৌলিক দুর্বলতা রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সংস্থার নজরদারির জন্য যথেষ্ট নয়। চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের জিডিপি তথ্য প্রকাশের ঠিক আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডারের এই মূল্যায়ন নয়াদিল্লিকে তীব্র অস্বস্তিতে ফেলেছে।