ভারতের জাতীয় পরিসংখ্যানের মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)। সংস্থাটির বার্ষিক ‘Article IV’ মূল্যায়নে ভারতের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস ডেটাকে ‘C’ গ্রেড দেওয়া হয়েছে। আইএমএফের গ্রেডেশন পদ্ধতিতে চারটি গ্রেডের মধ্যে এটি হলো দ্বিতীয় সর্বনিম্ন, যা নির্দেশ করে যে এই তথ্যগুলিতে এমন কিছু মৌলিক দুর্বলতা রয়েছে যা আন্তর্জাতিক সংস্থার নজরদারির জন্য যথেষ্ট নয়।
চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের জিডিপি তথ্য প্রকাশের ঠিক আগেই আইএমএফের এই কঠোর মূল্যায়ন নয়াদিল্লিকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।
আইএমএফের রিপোর্টে তুলে ধরা প্রধান দুর্বলতাগুলি:
কেন্দ্রের মোদী সরকার গঠনের পর থেকেই বিরোধীরা এ বিষয়ে প্রশ্ন তুললেও, এবার আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে এই দুর্বলতাগুলি স্পষ্ট করে দেওয়া হলো:
১. পুরনো বেস ইয়ার (২০১১-১২): জিডিপি এবং উপভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) হিসেব করার জন্য এখনও ২০১১-১২ সালকে বেস ইয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আইএমএফের মতে, বর্তমান খরচের ধারা, মানুষের ব্যয়ের অভ্যাস এবং উৎপাদন কাঠামোর পরিবর্তন—এই পুরনো বেস ইয়ারে মোটেও ধরা পড়ে না।
২. প্রডিউসার প্রাইস ইনডেক্সের (PPI) অভাব: জিডিপি গণনায় ডিফ্লেটর হিসেবে পাইকারি মূল্য সূচক (WPI) ব্যবহার করতে হচ্ছে। PPI-এর অভাবে বাস্তব উৎপাদন খরচ সঠিকভাবে ধরা সম্ভব হচ্ছে না।
৩. উৎপাদন ও ব্যয় পদ্ধতির মধ্যে বড় ফারাক: রিপোর্টে বলা হয়েছে—উৎপাদন ও ব্যয় পদ্ধতিতে যে হিসাব করা হচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গরমিল রয়েছে। এতে বোঝা যায় যে ব্যয়-ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহে এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের (Informal Sector) কভারেজে ঘাটতি রয়েছে।
৪. মৌসুমি সমন্বয়ের অভাব: ভারতের ত্রৈমাসিক জিডিপি তথ্য এখনও সিজিনালি অ্যাডজাস্টেড (Seasonally Adjusted) নয়। উন্নত দেশগুলিতে এটি বাধ্যতামূলক।
অন্যান্য ক্ষেত্রে মূল্যায়ন ও টাকার বিনিময় হার:
সামগ্রিক ডেটা মান: ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস ছাড়া বাকি ক্ষেত্রগুলো (সরকারী অর্থ পরিসংখ্যান, বৈদেশিক সেক্টর, মনিটারি ও ফিনান্সিয়াল ডেটা) সবগুলোতে ভারত পেয়েছে ‘B’ গ্রেড। দুর্বলতাগুলি অপরিবর্তিত থাকলেও নতুন বেস ইয়ার ও আধুনিক পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনা এগোচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
মুদ্রাস্ফীতি: উপভোক্তা মূল্য সূচক (CPI)-কেও ‘B’ গ্রেড দেওয়া হয়েছে। কারণ, পণ্যের ঝুড়ি ও ওজন পদ্ধতি বর্তমান ব্যয় অভ্যাসের সঙ্গে খাপ খায় না।
টাকার বিনিময় হার: আইএমএফ ভারতের এক্সচেঞ্জ রেট ব্যবস্থাকে নতুন করে শ্রেণিবিন্যাস করে বলেছে যে এই ব্যবস্থা একপ্রকার ‘হামাগুড়ি দিয়ে চলছে’ (Crawl-like Arrangement)। এর অর্থ, গত ছয় মাস বা তার বেশি সময় ধরে টাকার বিনিময় হার একটি ২%-এর সংকীর্ণ সীমার ভিতরে রয়েছে, যা ‘ভাসমান বিনিময় হার’ (Floating) বলে গণ্য হয় না। আইএমএফ রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে (RBI) আরও ফ্লেক্সিবিলিটি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং পরামর্শ:
আইএমএফ চলতি অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধি ৬.৬% এবং পরের বছর ৬.২% হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, বর্তমান নিম্ন মুদ্রাস্ফীতির পরিস্থিতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আরও সুদের হার কমানোর সুযোগ আছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারকে আগামী ২০২৬-২৭ আর্থিক বছরের রাজস্ব ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় শুল্কের প্রভাব বিবেচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।