‘১০০ জন থেকে ২-৩ জন’! ইউরোপ-আমেরিকা থেকে পর্যটক বাড়লেও কেন ফাঁকা রইল বাংলার পর্যটন শিল্প? কী বলছেন ট্যুর অপারেটররা?

ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রকের ২০২৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করার নিরিখে দেশের মধ্যে মহারাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ। ২০২৩ সালে যেখানে ২৭ লক্ষ বিদেশি পর্যটক রাজ্যে এসেছিলেন, ২০২৪ সালে সেই সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে ৩১ লক্ষে দাঁড়িয়েছে। তবে এই সাফল্যের উল্টো ছবি দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে থেকে আসা পর্যটকদের ক্ষেত্রে।

কেন্দ্রীয় রিপোর্ট ও বাংলাদেশি পর্যটকদের হ্রাস:

২০২৩ সালে ভারতে আগত আন্তর্জাতিক পর্যটকদের মধ্যে বাংলাদেশিরা ছিলেন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক (২১.২ লক্ষ), কিন্তু ২০২৪ সালে এই সংখ্যাটি কমে ১৭.৫ লক্ষে নেমে এসেছে এবং তারা আমেরিকানদের পরে দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছেন।

বিশেষত গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পর কলকাতা ও ঢাকার মধ্যে বিমান চলাচলের সংখ্যা কমেছে। দুবাই, আবুধাবি এবং দোহা হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং ব্রিটেন থেকে পশ্চিমবঙ্গে পর্যটকদের আগমন বাংলাদেশিদের তুলনায় বেশি। যদিও স্থল সীমান্ত ধরলে বাংলায় আগত বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে এখনও বাংলাদেশিরাই সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি, তবে সেই সংখ্যাও আগের তুলনায় অনেকটাই কম।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের এই সাফল্যকে উৎসবকেন্দ্রিক ও ধর্মস্থানকেন্দ্রিক পর্যটন-সহ সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের ফল বলে দাবি করেছেন।

চিকিৎসা পর্যটনে বড় ধাক্কা:

বিদেশ থেকে যত রোগী ভারতে আসেন, তার ৭০ শতাংশই বাংলাদেশের নাগরিক। বছরখানেকের বেশি সময় ধরে এই রোগীর সংখ্যা কমেছে। কলকাতার হাসপাতালগুলিতে এক বছর আগের তুলনায় রোগীর সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশে নেমে এসেছে।

পূর্ব ভারতের হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রূপক বড়ুয়া জানান, আগে পিয়ারলেস হাসপাতালের বহির্বিভাগে দিনে গড়ে দেড়শো বাংলাদেশি আসতেন, এখন তার ১০ শতাংশের মতো আসে। তিনি জানান, জরুরি অবস্থা ছাড়া মেডিকেল ভিসা দেওয়া প্রায় বন্ধ করে দেওয়ায় এই পরিস্থিতি। যদিও কেন্দ্র সম্প্রতি আয়ুষ পোর্টাল চালু করে মেডিকেল ভিসা প্রক্রিয়া সরল করার চেষ্টা করছে।

পর্যটন শিল্পে ক্ষতির মুখে:

ট্যুর অপারেটরদের মতে, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে এবং ভিসা পদ্ধতি কঠিন হওয়ায় পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্যুর অপারেটর স্বরূপ ভট্টাচার্য জানান, আগে যেখানে ১০০ জন বাংলাদেশি পর্যটক আসতেন, এখন সেই সংখ্যা দুই থেকে তিন শতাংশে নেমে এসেছে।

দেবাশিস মৈত্রের মতে, বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাব পূরণ হচ্ছে না ইউরোপ-আমেরিকার পর্যটকদের দিয়ে, কারণ বাংলাদেশিরা কম বাজেটে এই রাজ্যে ঘুরতেন এবং তারা যে সংখ্যায় আসতেন, সেই ফাঁক পূরণ করা সম্ভব নয়। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ভিসা নিয়ে কড়াকড়ির কারণে বাংলাদেশিরা ভারতে না এসে থাইল্যান্ড, ব্যাংকক বা নেপালের মতো দক্ষিণ এশীয় দেশগুলিতে যাচ্ছেন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy