দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের জলরাশি ক্রমাগত উত্তাল হয়ে উঠছে। শ্রীলঙ্কার কাছে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ আরও শক্তি সঞ্চয় করে এখন ঘূর্ণিঝড় ‘দিতওয়া’-তে পরিণত হয়েছে। এটি দ্রুত উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং এর লক্ষ্য উত্তর তামিলনাডু, পন্ডিচেরি এবং দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলভাগ।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMD)-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২৯ নভেম্বর রাত থেকে ৩০ নভেম্বর সকালের মধ্যেই ঝড়টি উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। ইতিমধ্যেই ভিজাগ সাইক্লোন ওয়ার্নিং সেন্টার উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে জোরদার সতর্কতা জারি করেছে। কেন্দ্রের আধিকারিক জগন্নাথ কুমার জানিয়েছেন, আগামী ছয় দিনে উত্তর উপকূলীয় জেলাগুলিতে বৃষ্টির তীব্রতা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস:
উত্তর উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ: তৃতীয় দিন থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হবে এবং চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ দিনে ব্যাপক ও অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
দক্ষিণ উপকূলীয় জেলা (তামিলনাডু, পন্ডিচেরি): তৃতীয় দিন থেকে পঞ্চম দিন পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির তীব্রতা দেখা যাবে এবং ষষ্ঠ দিনে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা।
ঝড়ের দাপট: দক্ষিণ অন্ধ্র উপকূলের দিকে প্রথম থেকেই ৩৫ থেকে ৪৫ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে দমকা হাওয়া বইতে পারে, যা ঘূর্ণিঝড় যত এগোবে তত বেড়ে ৬০ থেকে ৯০ কিমি প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।
আইএমডি জানিয়েছে, বর্তমানে দিতওয়া পণ্ডিচেরি থেকে প্রায় ৬৪০ কিমি এবং চেন্নাই থেকে ৭৩০ কিমি দূরে অবস্থান করছে। আগামী ১২ ঘণ্টায় এটি আরও জোরালো রূপ নিতে পারে।
বিশেষ সতর্কতা ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ:
অন্ধ্রপ্রদেশ স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির সতর্কতায় বলা হয়েছে, চিত্তোর, তিরুপতি, নেল্লোর, প্রকাশম, ওয়াইএসআর কাডাপা, অন্নামাইয়া ও শ্রী সত্য সাই জেলাগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই সাত জেলায় ২৯ নভেম্বর থেকে টানা তিন দিন ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় উপকূলবর্তী গ্রামগুলিকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। উত্তাল সমুদ্রে জেলেদের নামতে সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে। ঝোড়ো হাওয়া ও অতিবৃষ্টির আশঙ্কায় কৃষকদের শস্য ও গবাদিপশু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় উপকূলবর্তী ব্লকগুলিতে কন্ট্রোল রুম চালু হয়েছে এবং IMD ইতিমধ্যেই সম্ভাব্য বিপর্যয়প্রবণ অঞ্চলে অরেঞ্জ ও রেড অ্যালার্ট জারি করেছে।
এদিকে, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে উত্তর পশ্চিম ভারতে আবহাওয়ায় বড় কোনও পরিবর্তন না এলেও, পাঞ্জাবে ঠান্ডার দাপট বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড় আরও শক্তি সঞ্চয় করার আগেই উপকূলবর্তী বাসিন্দাদের সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলার আবেদন জানিয়েছে প্রশাসন।