অতিরিক্ত অ্যাসিড ক্ষরণকে সহজ কথায় হাইপার অ্যাসিডিটি (Hyperacidity) বা অম্লতা বলা হয়। এটি একটি অত্যন্ত সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা আজকাল বহু রোগীর মধ্যে দেখা যায়। পাকস্থলী প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে আড়াই লিটার অ্যাসিড তৈরি করে, যা হজমে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু যখন এই অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় বা এর প্রতি সংবেদনশীলতা (Sensitivity) বাড়ে, তখনই হাইপার অ্যাসিডিটির লক্ষণ দেখা দেয়।
🔬 অতিরিক্ত অ্যাসিড ক্ষরণের কারণ:
হাইপার অ্যাসিডিটির কারণগুলি দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়—শারীরবৃত্তীয় নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং জীবনযাত্রার ভুলভ্রান্তি।
-
শারীরবৃত্তীয় নিয়ন্ত্রণহীনতা:
-
হরমোনের কারসাজি: অ্যাসিড ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে জি সেল থেকে নিঃসৃত শক্তিশালী হরমোন গ্যাস্ট্রিন। যখন জি সেল হাইপারপ্লাসিয়া হয় বা প্যারাইটাল সেল অতিরিক্ত কাজ করে (প্যারাইটাল সেল হাইপারট্রফি), তখন অ্যাসিড ক্ষরণ বাড়ে।
-
রোগ বা টিউমার: কিছু বিরল রোগের (যেমন মিনেট্রির ডিজিজ) কারণে অ্যাসিড ক্ষরণ বেশি হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে টিউমারের কারণেও এটি হতে পারে।
-
ডিফেন্স মেকানিজম নষ্ট: আলসার বা ইরোশনের কারণে পাকস্থলীর উপরের প্রতিরক্ষামূলক মিউকোসা নষ্ট হয়ে যায়, ফলে অ্যাসিড সরাসরি নার্ভের সংস্পর্শে আসে এবং নার্ভগুলো হাইপার সেন্সিটিভ হয়ে যায়।
-
-
জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস:
-
অত্যধিক তেল-মসলা: তেল, ঝাল, মশলাযুক্ত খাবার, টক জাতীয় খাবার, ভাজাভুজি, সরষে, বাদাম, নারকেল, চাটনি খেলে অ্যাসিড সিক্রেশন বাড়ে।
-
উত্তেজক পানীয়: কফির মতো উত্তেজক পানীয় অ্যাসিড ক্ষরণ বাড়ায়।
-
খালি পেটে থাকা: অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকলে অ্যাসিড পাকস্থলীকে ড্যামেজ করার সুযোগ পায় এবং অ্যাসিডের লক্ষণ দেখা দেয়।
-
অস্বাভাবিক স্থানে অ্যাসিড: রিফ্লাক্স ডিজিজে অ্যাসিড যখন খাদ্যনালীতে (Eosphagus/Foodpipe) উঠে আসে (যেটি অ্যাসিডে অভ্যস্ত নয়), তখনই বুকে জ্বালা-সহ অস্বাভাবিক লক্ষণ প্রকাশ পায়।
-
⚠️ প্রধান লক্ষণ:
হাইপার অ্যাসিডিটির প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
-
বুক জ্বালা করা।
-
বুকের মধ্যে ব্যথা অনুভব করা (যা কার্ডিয়াক সিমটম বলে মনে হতে পারে)।
-
মুখের মধ্যে টক জল আসা।
-
ঢেকুর ওঠা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: বুক জ্বালা বা বুকে ব্যথা হার্টের রোগের মতো মনে হতে পারে বটে, কিন্তু অ্যাসিডিটি থেকে হার্টের রোগ হয় না। তবে হাইপার অ্যাসিডিটির কারণে আলসার হতে পারে।
💊 চিকিৎসা ও সতর্কতা:
হাইপার অ্যাসিডিটি হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। তিনি খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা, এবং কোনো ওষুধ সেবন করা হচ্ছে কিনা—এই সমস্ত ইতিহাস জেনে কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন।
-
প্রাথমিক চিকিৎসা: অ্যাসিড থেকে রিলিফ পাওয়ার জন্য প্রাথমিক অবস্থায় অ্যান্টাসিড খেতে হবে।
-
দীর্ঘকালীন চিকিৎসা: দীর্ঘকালীন অ্যাসিডিটি চললে প্যান্টোপ্রাজল জাতীয় ওষুধ বা পি.পি.আই (PPI) খুব ভালো কাজ করে।
-
সতর্কতা: এই ওষুধগুলো খেয়ে বেশিদিন সিমটমকে ধামাচাপা না দিয়ে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত এবং ঠিক কী কারণে হাইপার অ্যাসিডিটি হচ্ছে, তা জানা জরুরি।
অ্যাসিডিটির কারণে ক্যানসারের মতো রোগ না হলেও, আলসারের ঝুঁকি থাকে। তাই সাবধান হওয়া দরকার।