আমেরিকান চিকিৎসকদের কমিটি ফর রেসপন্সিবল মেডিসিন (PCRM) মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনকে (FDA) পনির পণ্যের উপর স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি সম্পর্কিত সতর্কতা লেবেল লাগানোর জন্য জোরালো আবেদন করেছে। তাদের দাবি, দুগ্ধজাত পনির সেবনের কারণে নারীদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এবং এই রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।
🔬 গবেষণায় কী বলছে:
PCRM-এর আবেদনটি একাধিক গবেষণার উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
-
ইস্ট্রোজেন ও ঘনত্ব: গরুর দুগ্ধে ইস্ট্রোজেন হরমোন থাকে। দুধ যখন পনিরে রূপান্তরিত হয়, তখন এই ইস্ট্রোজেনগুলি আরও ঘন হয়। PCRM বলছে, এই ইস্ট্রোজেনগুলি মানবদেহে জৈবিকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং স্তন ক্যান্সারের মৃত্যুর হার বাড়িয়ে তোলে।
-
৪৯% মৃত্যু ঝুঁকি: লাইফ আফটার ক্যান্সার এপিডেমিওলজি স্টাডি (Life After Cancer Epidemiology Study) অনুযায়ী, যেসব মহিলা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রতিদিন উচ্চ ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার (যেমন: পনির) এক বা একাধিকবার গ্রহণ করেছেন, তাদের স্তন ক্যান্সারে মৃত্যুর হার ছিল ৪৯ শতাংশ বেশি, যারা প্রতিদিন এক-অর্ধেকেরও কম দুগ্ধজাত পনির খেয়েছেন বা বর্জন করেছেন।
📢 PCRM-এর দাবি ও সতর্কতা লেবেল:
১২,০০০ চিকিৎসা পেশাদার সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত PCRM চায়, সিগারেটের প্যাকেটের মতো পনিরের গায়েও সতর্কবার্তা থাকুক। তারা একটি উদাহরণ দিয়েছে, যেখানে লেখা থাকবে:
“দুগ্ধ পনিরের মধ্যে প্রজনন হরমোন রয়েছে যা স্তন ক্যান্সারের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।”
PCRM-এর সভাপতি নীল বার্নার্ড বলেছেন, “পনির প্রস্তুতকারকরা গোলাপী ফিতা চাপড়ানোর পরিবর্তে (যা ক্যান্সার সচেতনতা দেখায়), তাদের সতর্কতা লেবেল যুক্ত করা উচিত। আমরা চাই নারীরা সচেতন হন যে দুগ্ধ পনির তাদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।”
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত:
বিশ্বখ্যাত স্তন সার্জন ডঃ ক্রিস্টি ফানক স্তন ক্যান্সার এবং পশু থেকে উৎপাদিত দুগ্ধ পণ্যের মধ্যে যোগসূত্রের কথা বলেছেন। তাঁর মতে, প্রাণীর প্রোটিন ও ফ্যাট গ্রহণ শরীরের কোষীয় স্বাভাবিক ক্রিয়াকে দমন করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। তিনি বলেন, “ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি, প্রদাহ প্রসারণ, এবং ডিএনএকে পরিবর্তিত করে দেয়, যা একজন ক্যান্সারের রোগীকে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ঝুঁকতে থাকে।”
🌱 বিকল্প ও সচেতনতা:
PCRM-এর নেতৃত্বে ‘লেটস বিট ব্রেস্ট ক্যান্সার’ প্রচারে নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন, অ্যালকোহল গ্রহণ সীমাবদ্ধ করা এবং আরও বেশি উদ্ভিদ-ভিত্তিক (শাক সবজি, ফলমূল) খাবার খাওয়ার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। যেহেতু আমেরিকা সহ সারা পৃথিবীতেই ফাস্টফুডে পনিরের ব্যবহার বেশি, তাই চিকিৎসকরা মনে করছেন রোগ হয়ে চিকিৎসা করানোর চেয়ে পনির বর্জন করে রোগ না হওয়ার সচেতনতা বেশি সাশ্রয়ী।
চিকিৎসকরা ভারতীয় নারীদের প্রতিও একই আহ্বান জানিয়েছেন: এখন সময় এসেছে দুধ ও পনির জাতীয় খাবার বর্জন করে নিজের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার।