‘ভুল বুঝেছিলাম, ফিরছি ফেডারেশনে!’ কেস তুলে ক্ষমা চাইলেন পরমব্রত! এবার রুদ্রনীলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক স্বরূপ বিশ্বাস

সম্পর্কের নতুন সমীকরণ তৈরি হল টলিউডে। ১৩ জন পরিচালকের করা মামলা থেকে সরে এসে ‘ভুল স্বীকার’ করলেন অভিনেতা-পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে, স্বাধীন ছবি নির্মাণ এবং অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের বিরুদ্ধে বকেয়া টাকার অভিযোগ নিয়ে শুক্রবার টেকনিশিয়ান্স স্টুডিয়োতে জরুরিভিত্তিক সাংবাদিক সম্মেলন ডাকল ‘ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’। ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস, পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায় ও পাভেল সহ অন্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

কেস তুলে ফেডারেশনে ফিরলেন পরমব্রত

সাংবাদিক সম্মেলনে ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস প্রথম বিষয়টি হিসেবে তুলে ধরেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফেডারেশনের মনোমালিন্য দূর হওয়ার বিষয়টি। তিনি জানান, গত বছর ফেডারেশনের বিরুদ্ধে যে ১৩ জন পরিচালক মামলা করেছিলেন, পরমব্রত তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, “তবে, ফেডারেশন যেকোনও সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চায়।” তিনি জানান, সম্প্রতি পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় একটি ভিডিয়ো বার্তা এবং ইমেল মারফত জানিয়েছেন যে, “সেই সময়ে কিছু পরিস্থিতি এবং কিছু তথ্য তাঁকে ভুল পথে পরিচালিত করেছিল।” নিজের ভুল বুঝতে পেরে তিনি কেস থেকে বেরিয়ে এসেছেন এবং ফেডারেশনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চেয়েছেন।

স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, “পরিচালকমণ্ডলীর করা কেসের কারণে আমাদের অনেক সম্মানহানি, সুনামহানি এবং অর্থহানি হয়েছে।” কিন্তু পরমব্রতর ভুল স্বীকারের পর ইসি কমিটির জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, মনোমালিন্য আর থাকল না, তাঁরা আবার একসঙ্গে কাজ করবেন।

‘স্বাধীন ছবি’ কী? ফেডারেশনের নতুন শর্ত

দ্বিতীয় বিষয় হিসেবে ‘স্বাধীন ছবি’ বা ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মস’-এর সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করেন স্বরূপ বিশ্বাস। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম তৈরি হয়ে যাওয়ার পর কিছু বড় প্রযোজক নির্মাতাদের পিছন থেকে ইনভেস্ট করে ছবিটা সিনেমা হলে রিলিজ করবেন, বড় বড় পোস্টার লাগাবেন, প্রোমোশন করবেন। তা হলে সেটা আর স্বাধীন ছবি থাকল কীভাবে?”

পরিচালক পাভেল এই প্রসঙ্গে বলেন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি মানে স্টুডিয়ো সিস্টেমের বাইরে তৈরি হওয়া ভিন্ন কনসেপ্টের সিনেমা। তিনি স্পষ্ট করেন, ফেডারেশনের সেই ছবিগুলি নিয়েই সমস্যা যেগুলি কম বাজেটে তৈরি হওয়ার পর ব্যবসায়িক অ্যাজেন্ডা নিয়ে ঘটা করে প্রোমোশন ও পোস্টার লাগায়, কিন্তু ফেডারেশনের টেকনিশিয়ানদের বাদ দিয়ে কাজ করে। পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায় বলেন, “ফেডারেশন কোনও জুজু নয়,” বরং এটি টেকনিশিয়ানদের জন্য একটা সমাধান। তিনি স্বাধীন ছবির নির্মাতাদের পুঁজি কম থাকলে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।

‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’ বিতর্ক ও রুদ্রনীল ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ

তৃতীয় বিষয়টি ছিল ‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’ ছবি এবং অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের সঙ্গে ফেডারেশনের বিতর্ক। ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস জানান, এই ছবির প্রযোজক প্রতীক চক্রবর্তী ভুল বার্তা দিয়েছেন যে তাঁর কাছে কেউ টাকা পায় না। বরং, প্রমাণিত সত্য হলো, ফেডারেশন এখনও তাঁর কাছে ১৩ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা পায়।

এরপর রুদ্রনীল ঘোষের বিষয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন স্বরূপ বিশ্বাস। তিনি জানান, রুদ্রনীলের প্রযোজনা সংস্থার কাছেও টেকনিশিয়ান ভাইদের বকেয়া রয়েছে। সভাপতি স্পষ্ট জানান, “টানা দু’বছর ধরে টেকনিশিয়ানদের টাকা ছাড়া কাজ করিয়ে গিয়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ।” শুধু টেকনিশিয়ানদের বকেয়াই নয়, ওটিটি সিরিজের ফিন্যান্সার অঙ্কুশ আগরওয়াল (১৫ লক্ষ) এবং পরিচালক প্রান্তিক গায়েনও (৪.৫ লক্ষ) রুদ্রনীলের কাছে প্রায় দু’বছর ধরে টাকা পান। স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, রুদ্রনীল যে টেকনিশিয়ানদের টাকা না দেওয়াকে সমর্থন করছেন, তা ‘ভদ্র সমাজে’ কাম্য নয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “উনি কি পারতেন আমাদের টেকনিশিয়ান ভাইয়েরা না থাকলে?” এই বকেয়ার অঙ্ক নয় নয় করে ৫ লক্ষ টাকা বলে জানান তিনি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy