দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকা প্রেক্ষাগৃহ আবারও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে, আর এর কেন্দ্রে রয়েছে প্রয়াত কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী জুবিন গর্গের শেষ কাজ। আগামী ৩১ অক্টোবর তাঁর সিনেমা ‘রই রই বিনালে’ মুক্তি পেতে চলেছে, আর এই একটি মাত্র ছবির জন্য অসম জুড়ে বেশ কয়েকটি বন্ধ সিঙ্গল স্ক্রিন থিয়েটার পুনরায় মেরামত করে চালু করা হচ্ছে! এই আবেগের সাক্ষী হচ্ছে মরিগাঁও জেলার জাগিরোডের গণেশ টকিজ, যা অতিমারির লকডাউনের পর থেকে বন্ধ ছিল।
গণেশ টকিজের সেই পুরনো, ঝুল-মাখা সাইনবোর্ড, যেখানে লেখা ‘পকেটমার হইতে সাবধান’, তা এখন যেন নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হতে প্রস্তুত। হল জুড়ে চলছে জোরকদমে সাফাই অভিযান, প্রতিটি সিট পরিষ্কার করা হচ্ছে এবং প্রোজেকশন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
হল কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা জানান, “মানুষ আমাদের কাছে প্রেক্ষাগৃহটি পুনরায় খোলার জন্য অনুরোধ করছিল। আমরা সব পরিষ্কার করছি… প্রয়াত জুবিনের সিনেমাকে ঘিরে এই উত্তেজনা অবিশ্বাস্য। দর্শকরা ‘রই রই বিনালে’ দেখতে চায়, আর সেই কারণেই আমরা এই হল খুলে দিচ্ছি।”
অসমের প্রায় ৮০টির মতো থিয়েটারে ‘রই রই বিনালে’ প্রদর্শনের প্রস্তুতি চলছে। প্রথম সপ্তাহের টিকিট ‘বুক মাই শো’-তে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে! জুবিনের ছবিকে জায়গা দিতে বেশ কিছু থিয়েটার হিন্দি সিনেমার মুক্তি-সহ অন্যান্য সিনেমার প্রদর্শন বাতিল করেছে।
জাগিরোডের গণেশ টকিজ একসময় পরিচালক মুনিন বড়ুয়ার জীবনভিত্তিক সিনেমা ‘ভাইমন দা’-তে কাল্পনিক ‘চিত্রলেখা সিনেমা’ হিসেবে দেখানো হয়েছিল, যা অসমীয়া সিনেমার পতনের প্রতীক ছিল। বর্তমানে সেই হলটি জুবিনের সিনেমার মাধ্যমে যেন নতুন করে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে।
‘রই রই বিনালে’ হল যুদ্ধ-পরবর্তী অসমের পটভূমিতে তৈরি একটি পূর্ণদৈর্ঘ্যের সিনেমা, যেখানে সঙ্গীত এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ছবিটি জুবিন গর্গ এবং রাজেশ ভূঁইয়া যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন। জুবিন, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গৌতম শর্মার সঙ্গে এই সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন। গর্গকে একজন দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী শিল্পীর ভূমিকায় দেখা যাবে। অসমীয়া সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মুক্তির জন্য প্রস্তুত এই ছবির প্রথম শো শুরু হবে সকাল ৬:৩০টায় এবং শেষ শো রাত ১০:৩০টায়।
একটি সিনেমার মুক্তিকে ঘিরে একটি রাজ্যের মানুষের এমন আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠা এক বিরল ঘটনা। অসম জুড়ে, গণেশ টকিজের মতো পুনরায় খুলতে থাকা প্রেক্ষাগৃহগুলি যেন প্রয়াত জুবিন গর্গের স্মৃতি এবং শিল্পকে উদযাপনের জন্য তৈরি হচ্ছে।