বিশ্বব্যাপী একটি আতংকের নাম স্ট্রোক। স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির একটি রোগ। সেই রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়া অথবা ব্লক হয়ে যাওয়া স্ট্রোকের কারণ। স্ট্রোক কোনো সাধারণ রোগ নয়, কোনো ব্যক্তি স্ট্রোক করলে তার ক্ষয়ক্ষতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মারাত্মক হয়ে থাকে।
স্ট্রোক সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উদযাপন করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দেশেও বিশ্ব স্ট্রোক দিবস পালন করা হচ্ছে। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘না করলে সময় ক্ষেপন, স্ট্রোক হলেও বাঁচবে জীবন’।
স্ট্রোক কী?
স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির একটি রোগ। সেই রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়া অথবা ব্লক হয়ে যাওয়া স্ট্রোকের কারণ।
অতএব স্ট্রোক দুই ধরনের-
>>> রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ। একে বলে হেমোরেজিক স্ট্রোক।
>>> রক্তনালি ব্লক হয়ে গিয়ে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত না যাওয়া এবং ঐ অংশের শুকিয়ে যাওয়া। একে বলে ইস্কেমিক স্ট্রোক।
কেন স্ট্রোক হয়?
সাধারণত কিছু ক্ষেত্রে অনেকদিন ধরে আস্তে আস্তে বাড়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হাই-প্রেসার, হাই-কোলেস্টেরল, ধূমপান, পারিবারিক স্ট্রোকের ইতিহাস, হার্টের অসুখ যেমন- অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, রক্তজমাট বাঁধা অসুখ, ক্যান্সার ইত্যাদি আরো অনেক কারণ রয়েছে স্ট্রোকের।
আবার অনেক সময় কোনো পূর্ব রোগ ছাড়াও হঠাৎ করেই হতে পারে স্ট্রোক। এক্ষেত্রে হঠাৎ উত্তেজিত হওয়া, জন্মগত রক্তনালির গঠনগত সমস্যা, জন্মগত এনজাইমের সমস্যা, মেটাবলিক সমস্যা ইত্যাদি রয়েছে। তাই শুধু বয়স্কদের নয়, একেবারে তরুণদের মধ্যেও স্ট্রোক হতে দেখা যায়।
স্ট্রোকের লক্ষণ কোনগুলো-
>>> হঠাৎ করে বিভ্রান্ত লাগতে পারে।
>>> কোনো কারণ ছাড়াই শরীরের কোনো অংশ দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
>>> হাঁটতে অসুবিধা হতে পারে।
অনেক সময়ই স্ট্রোক হলেও বোঝা যায় না। কিন্তু এই ধরনের লক্ষণগুলো দেখা দিলে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া যেতে পারে। কেউ যদি এই সময়ে একা থাকেন, তা হলে কাউকে ডেকে দ্রুত সাহায্য চাওয়া উচিত। কিছু কথা মাথায় রাখতে হবে এই সময়ে। সেগুলো কী জেনে নিন-
>>> যদি কোনো লক্ষণ চোখে পড়ে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্যেই স্ট্রোক হয়। তাই কোনো লক্ষণ দেখা দিলে, তা নিজে থেকেই সেরে যাবে ভেবে কখনও অপেক্ষা করবেন না।
>>> যদি মনে হয় কারও স্ট্রোক হচ্ছে, তা হলে দেখুন তিনি ঠিক করে হাসতে পারছেন কি না, কোনো বাক্য শুনে তা বলতে পারছেন কি না, দুই হাত ঠিক করে তুলতে পারছেন কি না। এগুলোর কোনো কিছুই যদি না পারেন, তা হলে তখনই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন।
>>> অ্যাম্বুলেন্স ডাকার সময়ে ‘স্ট্রোক’ শব্দটি উল্লেখ করতে ভুলবেন না। জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু করা উচিত স্ট্রোকের ক্ষেত্রে। তাই জানা থাকলে অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে যে চিকিৎসক আসবেন, তিনি স্ট্রোকের চিকিৎসা শুরু করে দেওয়ার মতো প্রস্তুত হয়েই আসবেন।
>>> কখন কোন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে এবং সেগুলো কতটা বাড়ছে, তা ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে। চিকিৎসার সময়ে সব তথ্য সঠিক ভাবে দেওয়া এ ক্ষেত্রে আবশ্যিক। ডায়াবিটিস, স্লিপ অ্যাপনিয়া বা হাইপারটেনশনের মতো কোনো রকম রোগ থাকলে তা-ও বলে দিতে হবে।
>>> রক্তচাপ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা এবং পাল্স রেট খেয়াল রাখুন। মুখের কোনো অঙ্গ বেঁকে যাচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ এবং ধরন খেয়াল রাখতে হবে।
>>> স্ট্রোক হওয়ার সময়ে কিছু খেলে বা পান করলে শ্বাস আটকে সমস্যা হতে পারে। এমনকি, মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই এই সময়ে কোনো রকম খাওয়া-দাওয়া করা যাবে না।
>>> এই সময়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখে, যা যা করণীয়, তাই করে যেতে হবে। দুশ্চিন্তা করলে অনেক বেশি ভুল হয়ে যেতে পারে।