দীর্ঘদিন ধরে ওজন কমাতে গিয়ে অনেকের ত্বক ঝুলে যায়! যা বিব্রতকর হতে পারে। শরীরের যেসব স্থান থেকে চর্বি গলে যায়; সেখানকার চামড়া অনেকটা আলগা হয়ে ঝুলে হয়ে যায়। এর ফলে দেখতে অনেকটা বয়স্কদের মতো লাগে।
এমন হওয়ার কারণ কী? ত্বকের নীচে থাকে চর্বির স্তর। এর নীচে মাংসপেশীর আরও একটি স্তর থাকে। ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের প্রশস্ততাও বাড়তে থাকে। নতুন চর্বি কোষগুলোকে সমন্বিত করে ত্বক প্রসারিত করে।
তাই যখন শরীরের চর্বি কমিয়ে ফেলেন; তখন ত্বক আগের মতোই প্রসারিত অবস্থায় থাকে এবং ত্বকের নীচের চর্বি স্তরটুকু খালি থাকে। এ কারণে ত্বক ঝুলে হয়ে যায়।
তবে সবার ক্ষেত্রে এমনটি হয় না। নিয়ম মেনে ওজন না কমালে এবং শারীরিক কসরত না করলে এমনটি হয়ে থাকে। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এমন হলে মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম। রইলো কিছু টিপস-
>> জল পান করার বিকল্প নেই। প্রতিদিন ২ লিটার জল পান করতে হবে। শরীরের টক্সিন উপাদানগুলো বের করে দেয় জল। এজন্য ওজন কমানো থেকে শুরু করে শরীরের সুস্থতায় জল পান করতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে।
>> ওজন কমানোর সময় যে ডায়েট অনুসরণ করছেন; সেটি শরীরের জন্য ভালো না-কি খারাপ, তা জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পুষ্টিকর খাবার এবং নিয়মিত ওয়ার্কআউট করলে চর্বি কমানো ও পেশি গঠনে মূল ভূমিকা রাখে।
>> ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ভুল খাবার পরিহার করুন। ব্রোকলি, চর্বিযুক্ত মাংস, মাছ, পালংশাক ইত্যাদি খাবার খান। ভালো চর্বি গ্রহণ করলে শরীর একাই খারাপ চর্বিগুলো বাদ দিয়ে দেয়। এজন্য ভালো চর্বিজাতীয় খাবার যেমন- মাখন, ঘি, অলিভ অয়েল, কোকোনাট অয়েল দিয়ে খাবার রান্না করুন।
>> চিনি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। পারলে ফলের রস পান করুন। প্রতিটি ফলেই ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার ও শর্করা থাকে। যা ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং শরীর টাইট থাকে। এজন্য বেরি, আঙ্গুর, কলা, পেঁপে, কিউই, তরমুজ, আম, কমলা, আপেল ইত্যাদি খেতে পারেন। ফল খাওয়ার সেরা সময় হলো সকাল।
>> শুধু প্রোটিনজাতীয় খাবার না খেয়ে বরং শাক-সবজি বেশি পরিমাণে খান। এতে শরীর আরও ভালো থাকবে। ওজন কমলেও আপনি দুর্বল হয়ে পরবেন না। এ ছাড়াও চুল পড়া বা শরীর ঝুলে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলো হবে না।
>> প্রোটিনজাতীয় খাবারের মধ্যে ডায়েটারি প্রোটিন যেমন- ডাল, শিম, সয়া এবং বাদাম বেছে নিতে পারেন। এ ছাড়াও মাছ, মুরগি এবং টার্কির মতো চর্বিযুক্ত প্রোটিনগুলোও ওজন কমাতে নিয়মিত খেতে পারেন।
>> জল, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট (অন্যান্য রাসায়নিকের পাশাপাশি) দিয়ে শরীর গঠিত হয়। শরীরের বিভিন্ন কোষ তৈরি হয় ফ্যাট এবং প্রোটিনের সমন্বয়ে। তাই ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হবে কোনো উপাদানই বাদ দেওয়া চলবে না। পরিমাণে অল্প হলেও ফ্যাট, কার্বস খেতে হবে।
>> দুগ্ধজাতীয় খাবার যেমন- পনির, টকদই এবং বাটার মিল্ক এগুরো ক্যালসিয়াম, ফসফেট এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ। যা পেশি এবং হাড়কে পুষ্ট করে। তাই ওজন কমিয়ে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে দুগ্ধজাত খাবারও খেতে হবে। তবে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।
>> ডিম ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখে। প্রোটিন এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ ডিম ত্বকের কুঁচকানো ভাব ও ঝুলে যাওয়া ত্বকের সমস্যার সমাধান করে। এজন্য দিনে ২-৩টি ডিম খান।
>> ওয়েট লিফ্টিং করুন সপ্তাহে তিনদিন। এতে শরীর নির্দিষ্ট আকার ফিরে পাবে। ঝুলে যাওয়া ত্বক হবে টানটানে।
>> বেশিরভাগ মানুষের পেটে বেশি চর্বি জমে। তাই ওজন কমলে পেটের চামড়া ঝুলে যায়। এক্ষেত্রে নিয়মিত পেটের ব্যায়ামগুলো করতে হবে। এতে চামড়া ঝুলে যাওয়ার সম্ভাবনা কমবে। লেগ রাইজ, সিট-আপস, ক্রাঞ্চস, এয়ার বাইকিং এবং সাইড ব্রিজের মতো অনুশীলন ১৫-২০ মিনিট করলেই যথেষ্ট।