শব্দের গতির চেয়েও দ্রুত অথচ ‘নীরব’! নাসার X-59 সুপারসনিক বিমানের সফল প্রথম উড়ানে বিশ্বজুড়ে তোলপাড়

শব্দের গতির চেয়েও দ্রুত উড়তে পারে এমন একটি বিমানের সফল প্রথম উড়ান প্রত্যক্ষ করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা (NASA) এবং লকহিড মার্টিন (Lockheed Martin)। পরীক্ষামূলক সুপারসনিক বিমান, X-59 কোয়ায়েট সুপারসনিক টেকনোলজি (QueSST)-এর এই ঐতিহাসিক উড়ানটি ভবিষ্যতের বিমান ভ্রমণের জন্য এক মাইলফলক। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, এই “নীরব” বিমানটি শব্দের গতির চেয়েও দ্রুত উড়তে পারে, অথচ এর শব্দ অত্যন্ত কম।

ক্যালিফোর্নিয়ার মরুভূমিতে ঐতিহাসিক উড়ান

সোমবার ক্যালিফোর্নিয়া মরুভূমিতে X-59 তার প্রথম উড়ান সম্পন্ন করে। নাসার প্রধান পরীক্ষামূলক পাইলট, নীলস লারসেন, সকাল ৮:১৪ মিনিটে পামডেলের লকহিড মার্টিন স্কাঙ্ক ওয়ার্কস সুবিধা থেকে যাত্রা শুরু করেন এবং প্রায় ৩০ মিনিট পরে এডওয়ার্ডসের নাসা আর্মস্ট্রং ফ্লাইট রিসার্চ সেন্টারে সফলভাবে অবতরণ করেন।

এই প্রথম উড়ানটি সাবসনিক গতিতে (শব্দের গতির নিচে) সীমাবদ্ধ ছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল বিমানের আকাশে ওড়ার যোগ্যতা এবং সমস্ত সিস্টেমের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা।

X-59 এর মূল বৈশিষ্ট্য: সোনিক বুম এখন ‘থম্প’!

X-59 প্রোটোটাইপ বিমানটি তৈরি হয়েছে সোনিক বুম (Sonic Boom) কমানোর বিশেষ প্রযুক্তিতে। প্রচলিত সুপারসনিক বিমান শব্দের গতি ভাঙার সময় ১১০-১৪০ ডেসিবেল (বজ্রপাতের মতো জোরে শব্দ) উৎপন্ন করে, যা জনবসতিপূর্ণ এলাকার ওপর দিয়ে সুপারসনিক ফ্লাইট নিষিদ্ধের প্রধান কারণ।

কিন্তু X-59 এর বিশেষ ফিউজেলেজ জ্যামিতি (Unique Fuselage Geometry) এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এটি বায়ুপ্রবাহকে নাক থেকে সরিয়ে ডানা ও হালের উপর ছড়িয়ে দেয়। ফলস্বরূপ, বিকট সোনিক বুমের বদলে মাত্র ৬০-৮০ ডেসিবেলের মৃদু “থম্প” শব্দ তৈরি হয়, যা অনেকটা গাড়ির দরজা বন্ধ হওয়ার মতো।

গতি ও খরচ:

সর্বোচ্চ গতি: ম্যাক ১.৪ (প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১৫০৮ কিলোমিটার বা ৯৩৭ মাইল)।

দৈর্ঘ্য ও ইঞ্জিন: ৯৯ ফুট লম্বা, GE F414 ইঞ্জিন দ্বারা চালিত।

প্রকল্পের খরচ: ২০১৮ সাল থেকে তৈরি হওয়া এই প্রকল্পে NASA $৫০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে।

মার্কিন পরিবহন সচিব পিট বাটিগিগ জানিয়েছেন, এই প্রকল্পটি আমেরিকার বিমান চলাচলের নেতৃত্বকে শক্তিশালী করবে এবং বিমান ভ্রমণ সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণাকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে পারে। NASA-এর লক্ষ্য হল এই তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে বিমান চলাচল সংক্রান্ত বিশ্বব্যাপী নিয়মকানুন পরিবর্তন করা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy