ষাট বছর বয়স হলেই যেন অনেকের মনে হয় জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছেন। সাধারণভাবে মানুষ ৬০-৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচলেও, সাম্প্রতিক এক গবেষণা এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ‘রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স জার্নাল’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা এবং মার্কিন সায়েন্স ম্যাগাজিন ‘সায়েন্টিফিক আমেরিকান’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, মানুষের জীবনকালের শেষ সীমা এটি নয়।
এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল, মানুষ সর্বোচ্চ কতদিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে, তা নির্ধারণ করা। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গবেষকরা ১৩টি দেশের ১০৫ থেকে ১১০ বছরের বেশি বয়সী এক হাজারের বেশি নারী-পুরুষের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। পাশাপাশি, বিভিন্ন বয়সীদের গত ৬০ বছরের আয়ুষ্কাল সংক্রান্ত তথ্যও খতিয়ে দেখেছেন তারা।
গবেষণাটি জোরালোভাবে দাবি করছে, যদি কোনো অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনায় মৃত্যু না হয় এবং আমরা আমাদের জীবনযাপনকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে পারি, তাহলে খুব সহজেই ১৩০ থেকে ১৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচা সম্ভব। মূলত ৩০-৪০ বছর বয়সের পর থেকেই স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হলে যে কেউই দীর্ঘ জীবন লাভ করতে পারেন। তবে গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, বাস্তবিকভাবে মানুষের আয়ুর কোনো নির্দিষ্ট শেষ সীমা নেই।
গবেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন, বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরের কোষগুলো দুর্বল হতে শুরু করে। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো নানা রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উপরন্তু, বর্তমানের দূষিত বায়ু ও পরিবেশ দূষণও আমাদের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে এই প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, যদি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং একটি সুস্থ জীবনযাপন গড়ে তোলা যায়, তাহলে রোগ-ব্যাধি কম হবে এবং আমাদের আয়ু আরও বাড়বে বলে মনে করছে এই গবেষণা।
এই তত্ত্বের বাস্তব উদাহরণও বিদ্যমান। বিশ্বের অন্যান্য অংশের তুলনায় জাপানের মানুষের গড় আয়ু তুলনামূলকভাবে বেশি, যার প্রধান কারণ তাদের সুশৃঙ্খল জীবনযাপন। আধুনিক মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দিন বেঁচে থাকার রেকর্ড ফরাসি নারী জেনি ক্যালমঁতের, যিনি ১৯৯৭ সালে ১২২ বছর বয়সে প্রয়াত হন। আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ জাপানের কানে তানাকা, যিনি বর্তমানে ১১৮ বছর বয়সেও বেশ সতেজ জীবনযাপন করছেন।
তাই, গবেষণাটি আশার আলো দেখাচ্ছে যে সঠিক জীবনযাপন এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার মাধ্যমে শতবর্ষী হওয়া এখন আর কেবল স্বপ্ন নয়, বরং একটি বাস্তব সম্ভাবনা।