প্রতিটি সম্পর্কই এক একটি রাজনৈতিক সমীকরণ। হোক সেটা ব্যক্তিগত কিংবা পেশাগত। এই সমীকরণ কখনও কখনও এতটাই জটিল হয়ে দাঁড়ায় যে, একজন মানুষ নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অন্যদের কৌশলে ব্যবহার করেন। এই ধরনের মানুষকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘ম্যানিপুলেটিভ’ (Manipulative)। ম্যানিপুলেটিভ মানুষরা প্রায়ই মিথ্যা বলেন, দোষ চাপান, আবেগ ব্যবহার করেন বা ব্ল্যাকমেইল করে অন্যদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। তাঁরা অন্যদের অনুভূতিকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র নিজেদের প্রয়োজনকেই প্রাধান্য দেন।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ম্যানিপুলেটিভ মানুষের আচরণ সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, এই ধরনের মানুষ সম্পর্কের মধ্যে বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারেন এবং অন্যদের মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেন। একজন ব্যক্তি ম্যানিপুলেটিভ কিনা তা বোঝার জন্য কিছু লক্ষণ রয়েছে। এই লক্ষণগুলো দেখলে সতর্ক হওয়া উচিত।
ম্যানিপুলেটিভ মানুষের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য
১. মিথ্যা বলা এবং দোষ চাপানো:
ম্যানিপুলেটররা প্রায়শই মিথ্যা বলেন এবং তাঁদের ভুল কাজের জন্য অন্যদের দোষ দেন। তাঁরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সত্যকে বিকৃত করতে পিছপা হন না।
২. মানসিক খেলা:
এই ধরনের মানুষ প্রায়ই মানসিক খেলা খেলেন, যেমন গ্যাসলাইটিং (Gaslighting)। গ্যাসলাইটিং-এর মাধ্যমে তাঁরা আপনাকে নিজের বাস্তবতা সম্পর্কে সন্দেহ করতে বাধ্য করেন।
৩. মানসিক ব্ল্যাকমেইলিং:
ম্যানিপুলেটররা আপনার ভয়, অপরাধবোধ বা সহানুভূতি ব্যবহার করে আপনাকে তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী চালনা করতে পারেন।
৪. নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা:
এই ধরনের মানুষ আপনার জীবন, সিদ্ধান্ত এবং সম্পর্কের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চান। তাঁরা এমন কথা বলেন যা আপনি শুনতে চান, কিন্তু বাস্তবে সেগুলো আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এভাবে তাঁরা আপনাকে মানসিকভাবে নিজের উপর নির্ভরশীল করে তুলতে পারেন।
৫. সীমাবদ্ধতা লঙ্ঘন:
প্রত্যেক সম্পর্কের একটি সীমারেখা থাকে। ম্যানিপুলেটররা আপনার ব্যক্তিগত সীমানা উপেক্ষা করে আপনার ব্যক্তিগত পরিসরে ঢুকে পড়তে চান। এতে আপনার সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করা তাঁদের জন্য সহজ হয়। এমনকী তাঁরা আপনাকে অপরাধবোধে ভোগাতে পারেন, যাতে আপনি তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করেন।
৬. অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা:
একজন ম্যানিপুলেটর আপনাকে আপনার বন্ধু এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করতে পারেন, যাতে আপনার উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে।
কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
ম্যানিপুলেটিভ মানুষের আচরণ মোকাবিলা করা সহজ নয়, তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করে আপনি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন:
সীমা নির্ধারণ করুন: সম্পর্কে স্পষ্ট সীমারেখা টানুন এবং সেগুলো রক্ষা করুন।
সচেতন থাকুন: ম্যানিপুলেটিভ আচরণ চিনতে শিখুন এবং সেগুলোকে প্রশ্ন করুন।
অপরাধবোধ এড়িয়ে চলুন: ম্যানিপুলেটররা যাতে আপনাকে অপরাধবোধে ফেলতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
সমর্থন নিন: প্রয়োজন হলে বন্ধু, পরিবার বা পেশাদার মনোবিদের সাহায্য নিন।
শেষ কথা
ম্যানিপুলেটিভ মানুষের আচরণ সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের মানুষ সম্পর্কের মধ্যে জটিলতা তৈরি করতে পারেন এবং অন্যদের মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেন। তাই, ম্যানিপুলেটিভ আচরণ চিনে তা মোকাবিলা করার কৌশল রপ্ত করা জরুরি। মনে রাখবেন, সুস্থ এবং ইতিবাচক সম্পর্কই জীবনকে সুন্দর করে তোলে।