চোখের রং বলে দেবে রোগের ঝুঁকি! জেনে নিন আপনার চোখের রহস্য

চোখ শুধু মনের জানালা নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কেও অনেক গোপন কথা ফাঁস করে দেয়। চিকিৎসকের কাছে গেলে প্রথম চোখ পরীক্ষার কারণও তাই। তবে আপনি কি জানেন, আপনার চোখের রংও আগাম জানান দিতে পারে কোন কোন রোগের ঝুঁকি আপনার বেশি? চলুন, এই বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেওয়া যাক-

>> নীল, সবুজ বা ধূসর চোখ ও ইউভেল মেলানোমা:

যাদের চোখের রং নীল, সবুজ বা ধূসর, তাদের মধ্যে এক বিশেষ ধরনের চোখের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এই ক্যান্সারটি ইউভেল মেলানোমা নামে পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় আড়াই হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। তাই যাদের হালকা রঙের চোখ, তাদের চোখের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আরও বেশি সতর্ক থাকা উচিত।

>> নীল চোখ ও টাইপ ১ ডায়াবেটিস:

২০১১ সালের একটি ইউরোপীয় গবেষণা অনুসারে, নীল চোখের অধিকারী এবং ফর্সা ত্বকের মানুষেরা অন্যদের তুলনায় টাইপ ১ ডায়াবেটিসে বেশি ভুগতে পারেন। যদিও এই বিষয়ে আরও বিশদ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে, তবে হালকা রঙের চোখের ব্যক্তিদের ডায়াবেটিসের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।

>> বাদামি বা নীল চোখ ও শ্রবণশক্তি হ্রাস:

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের চোখের রং বাদামি বা নীলাভ, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের শ্রবণশক্তি অন্যদের তুলনায় দ্রুত কমতে পারে। এর কারণ হিসেবে মনে করা হয়, বাদামি চোখের মানুষের চোখে ও কানে বেশি মেলানিন থাকে। তীব্র শব্দের ক্ষেত্রে এটি কিছুটা সুরক্ষা দিলেও, পরবর্তী জীবনে শ্রবণশক্তি হ্রাসের কারণ হতে পারে।

>> নীল চোখ ও এন্ডোমেট্রিওসিস:

যেসব নারীর চোখের রং নীল, তাদের এন্ডোমেট্রিওসিসের ঝুঁকি বেশি থাকে। এই অবস্থায় জরায়ুর ভেতরের টিস্যু জরায়ুর বাইরেও বৃদ্ধি পায়। যখন এটি মূত্রাশয় ও অন্ত্রের মতো অঙ্গগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাকে ডিপ ইনফিলট্রেটিং এন্ডোমেট্রিওসিস বলা হয়। নীল চোখের নারীদের ক্ষেত্রে এই রোগের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।

>> গাঢ় বাদামি চোখ ও ছানি:

অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষণা অনুযায়ী, যাদের চোখের রং গাঢ় বাদামি, তাদের মধ্যে ছানির সমস্যা বেশি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে চোখের রং নির্বিশেষে ছানি পড়তে পারে, তাই নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করানো সবার জন্যই জরুরি।

>> বাদামি বা নীল দাগ ও ওয়ার্ডেনবার্গ সিন্ড্রোম:

যাদের চোখের মধ্যে বাদামি বা নীল রঙের কোনো অস্বাভাবিক দাগ দেখা যায়, তা ওয়ার্ডেনবার্গ সিন্ড্রোমের একটি উপসর্গ হতে পারে। এটি একটি বংশগত রোগ, যার কারণে চুল, ত্বক ও চোখের স্বাভাবিক রঙ্গক হারাতে পারে।

>> গাঢ় রঙের চোখ ও প্রসবের কষ্ট:

এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারীর চোখের রং গাঢ়, তারা প্রসবের সময় অন্যদের তুলনায় বেশি কষ্ট অনুভব করতে পারেন। এর সঠিক কারণ এখনও অজানা, তবে এটি একটি উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ।

>> হালকা রঙের চোখ ও ম্যাকুলার ডিজেনারেশন:

অস্ট্রেলিয়ার আরেকটি গবেষণা জানাচ্ছে, যাদের চোখের রং হালকা, তাদের বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, হালকা রঙের চোখে কম ইউভি আলো শোষিত হয়। ফলে বেশি আলো সরাসরি রেটিনাতে প্রবেশ করে ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং এই রোগ দৃষ্টিশক্তি হ্রাস করতে পারে।

চোখের রং শুধু আমাদের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না, এটি আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির পূর্বাভাসও দিতে পারে। তাই নিজের চোখের রঙের বৈশিষ্ট্য জেনে, সেই অনুযায়ী স্বাস্থ্য সচেতন থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং অস্বাভাবিক কিছু দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy