একই গোত্রে বিয়ে ডেকে আনছে জিনগত রোগ! সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা

বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে জিনগত রোগ বা জেনেটিক ডিজিজ শরীরে বাসা বাঁধার ঝুঁকি থাকে কি? এমন আশঙ্কার কথাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, একই সম্প্রদায়, গোষ্ঠী বা জাতের মধ্যে বিবাহ অথবা নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হলে জিনঘটিত রোগের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়।

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে আজও একই জাতের মধ্যে বিবাহের প্রচলন দেখা যায়। এমনকি অনেকেই আত্মীয়-পরিজনদের মধ্যেই বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে থাকেন। একই ধর্ম, জাত বা গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাহের এই সংস্কৃতিকে ‘এন্ডোগ্যামি’ বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এই এন্ডোগ্যামির কারণেই জিনঘটিত রোগের প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে।

জেনেটিক রোগে ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলে এন্ডোগ্যামি?

ভারতে একই জাতের মধ্যে বিবাহের প্রবণতা প্রায় সর্বত্রই বিদ্যমান এবং এটিকে স্বাভাবিক হিসেবেই ধরা হয়। দক্ষিণ ভারতে তো নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে বিবাহের রীতিও প্রচলিত আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের বিবাহ জিনঘটিত নানা রোগের কারণ হতে পারে। তাঁদের মতে, এই ধরনের সম্পর্কের ফলে বংশ পরম্পরায় বিভিন্ন রোগ বিস্তার লাভ করে।

এই প্রসঙ্গে ইউটিউবে এক সাক্ষাৎকারে প্রখ্যাত কনসালটেন্ট গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা. পালানিপ্পান মানিকাম স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “যদি স্বামী-স্ত্রীর শরীরে এই ধরনের কোনো জিনগত রোগ সুপ্ত থাকে, তবে তা তাঁদের সন্তানের শরীরেও সঞ্চারিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। এমনকি যদি বাবা-মায়ের শরীরে রোগের কোনো লক্ষণ নাও থাকে, তবুও তাঁদের সন্তানরা আক্রান্ত হতে পারে।”

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এন্ডোগ্যামির প্রথা দেশে বহু বছর ধরে চলে আসছে। সেই কারণে জিন ঘটিত রোগের বংশবিস্তারও দীর্ঘকাল ধরে অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি ‘নেচার জেনেটিক্স’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে, এন্ডোগ্যামির প্রভাবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হৃদরোগের সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে। উত্তর ভারতের তুলনায় দক্ষিণ ভারতে এই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যেতে পারে।

সমাধানের পথ:

এই সমস্যার সমাধানে বিশেষজ্ঞরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কথা বলছেন। তাঁদের মতে, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এন্ডোগ্যামির কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। ভিন্ন সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে বিবাহ স্থাপন করলে জিন ঘটিত রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব। এর পাশাপাশি, নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং শারীরিক পরীক্ষা করানো গেলে অনেক আগেই এই ধরনের রোগ শনাক্ত করা যেতে পারে। সচেতনতাই পারে জিনগত রোগের বিস্তার রোধ করতে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy