পরকীয়ার সমস্যা আজ বিশ্বজুড়ে এক উদ্বেগের কারণ। সমাজের চোখে এই সম্পর্ক নিন্দনীয় হলেও, এর গভীরে লুকিয়ে থাকে ব্যক্তিগত নানা জটিল মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক কারণ। অনেকেই সেই কারণগুলো সম্পর্কে অবগত নন। আসুন, জেনে নেওয়া যাক কোন বিশেষ পরিস্থিতির শিকার হয়ে মানুষ পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে পারেন:
১. অপছন্দের বিয়ে:
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পারিবারিক বা অভিভাবকের চাপে পড়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও বিয়ে করতে বাধ্য হন অনেকে। পাত্র বা পাত্রী তাদের ব্যক্তিগত পছন্দের না হওয়ায়, বিয়ের পর নিজেদের ভুল সিদ্ধান্ত উপলব্ধি করতে পারেন তারা। এই পরিস্থিতিতে, হঠাৎ করে অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠা অস্বাভাবিক নয়।
২. অপরিপূর্ণ তারুণ্য:
যাদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়, তাদের কাঁধে সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে খুব তাড়াতাড়ি। ফলে তারুণ্যের স্বাভাবিক আনন্দ ও স্বাধীনতা থেকে তারা বঞ্চিত হন। ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনে স্থিতিশীলতা আসার পর, সেই না পাওয়া আনন্দ ও অভিজ্ঞতার আকাঙ্ক্ষা থেকে অনেকেই পরকীয়া প্রেমের স্বাদ নিতে চান।
৩. কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা:
জীবনে অপ্রত্যাশিত কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েও অনেকে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। পরিবারের কোনো সদস্যের গুরুতর অসুস্থতা, প্রিয়জনের মৃত্যু, চাকরি হারানো বা আর্থিক কষ্টের মতো পরিস্থিতিতে অনেকে নিজেদের পরিবারে মানসিক শান্তির অভাব বোধ করেন এবং বাইরের কারো কাছে মুক্তির পথ খোঁজেন। এই সময়ে পরিচিত কোনো ব্যক্তির সাথে আবেগগত সম্পর্ক তৈরি হওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক নয়।
৪. গুরুত্বের অমিল:
বিয়ের আগে বা বিয়ের সময় অনেকেই নিজেদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন না। একটি দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে একে অপরের জীবনের মূল্যবোধ এবং গুরুত্ব অনুধাবন করা অপরিহার্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রীর জীবনের প্রধান লক্ষ্য এবং পছন্দের ক্ষেত্র ভিন্ন। এই অমিল দাম্পত্য কলহের জন্ম দেয় এবং পরিণতিতে পরকীয়ার দিকে ধাবিত করতে পারে।
৫. মেরু বিপরীত ব্যক্তিত্ব:
স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে কখনোই শতভাগ মিল থাকা সম্ভব নয়। একটি সুস্থ সম্পর্কের জন্য দু’জনকে একে অপরের সাথে মানিয়ে চলতে হয়। তবে যদি দু’জন মানুষ সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর হন, তবে সংসারে নিত্যদিনের অশান্তি লেগেই থাকে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে দীর্ঘকাল ধরে তিক্ততা বজায় থাকলে, যে কেউই সম্পর্কে শান্তি ও বোঝাপড়ার অভাব অনুভব করতে পারেন এবং পরকীয়ার দিকে ঝুঁকতে পারেন।
৬. যৌন অতৃপ্তি:
পরকীয়া সম্পর্কের অন্যতম প্রধান এবং বড় কারণ হলো বৈবাহিক জীবনে যৌন অতৃপ্তি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দাম্পত্য সম্পর্কের শারীরিক চাহিদা পূরণ না হওয়ার কারণেই একজন সঙ্গী বাইরের সম্পর্কে আকৃষ্ট হন। এটি মানসিক দূরত্বের পাশাপাশি শারীরিক চাহিদার অপূর্ণতা থেকেও জন্ম নিতে পারে।
পরকীয়া কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না হলেও, এর পেছনের কারণগুলো জানা দাম্পত্য সম্পর্কের জটিলতা বুঝতে এবং সমস্যা সমাধানে সহায়ক হতে পারে। একটি সুখী ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে খোলামেলা আলোচনা, বোঝাপড়া এবং একে অপরের প্রতি সম্মান ও মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।