বর্তমান কর্মব্যস্ত জীবন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং লাগাতার মানসিক চাপের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে হার্ট অ্যাটাক একটি অতি সাধারণ অথচ মারাত্মক প্রাণঘাতী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে মনে রাখবেন, হার্ট অ্যাটাক কিন্তু হঠাৎ করেই আসে না—আমাদের শরীর আগেভাগেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা সঙ্কেত দিয়ে থাকে। সেই সঙ্কেতগুলোকে চিনে নিতে পারলেই হয়তো বাঁচানো যেতে পারে বহু মূল্যবান জীবন। আসুন, সেই জরুরি সঙ্কেতগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
১. বুকে ব্যথা বা চাপ: হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে পরিচিত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ এটি। বুকে যদি ভারী টান, অস্বাভাবিক চাপ অথবা জ্বালাভাব অনুভূত হয় এবং তা কয়েক মিনিট স্থায়ী হয় অথবা থেমে থেমে ফিরে আসে, তাহলে একে একেবারেই উপেক্ষা করা উচিত নয়। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
২. শ্বাসকষ্ট: সাধারণ কাজকর্ম করার সময় অথবা বিশ্রামকালেও যদি শ্বাস নিতে অস্বাভাবিক কষ্ট হয়, তাহলে তা হৃদপিণ্ডের দুর্বলতা বা অকার্যকারিতার ইঙ্গিত হতে পারে। অনেক সময় এর সঙ্গে বুক ধড়ফড় করার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণটিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।
৩. উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপকে ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা অবহেলিত থাকলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। কারণ উচ্চ রক্তচাপ সরাসরি হৃদপিণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করানো এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা তাই অত্যন্ত জরুরি।
৪. উচ্চ কোলেস্টেরল: রক্তে যদি LDL অর্থাৎ খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়, তাহলে রক্তনালীর ভেতরের দেওয়ালে ধীরে ধীরে প্লাক জমতে শুরু করে। এই প্লাক হার্টে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই প্রত্যেকেরই উচিত অন্তত প্রতি ছয় মাসে একবার কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানো।
৫. অবিরাম ক্লান্তি: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরেও যদি ক্লান্তি না কাটে এবং দুর্বলতা অনুভব হতে থাকে, তাহলে এটি একটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এর অর্থ হতে পারে হৃদযন্ত্র শরীরের প্রয়োজনীয় রক্ত ঠিকমতো পাম্প করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
৬. ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেকটাই কমানো সম্ভব। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
৭. স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা হৃদপিণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং একইসঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। একটি সঠিক ডায়েট এবং নিয়মিত ব্যায়াম অভ্যাসের মাধ্যমে স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ করা তাই হৃদরোগ প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই সাতটি গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কেতকে চিনে নিতে পারলে এবং সময় মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তাই নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিন এবং এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। আপনার সচেতনতাই বাঁচাতে পারে আপনার অমূল্য জীবন।