সাবধান! উচ্চ কোলেস্টেরল ডেকে আনতে পারে টাক, ঝরতে পারে পায়ের লোমও!

এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল একটি আঠালো পদার্থ যা আমাদের ধমনীতে জমা হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। এর মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চর্বিযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এই ধরনের খাবারই মূলত শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে।

যদিও শরীরের প্রতিটি কোষের স্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্য কিছু পরিমাণে কোলেস্টেরল প্রয়োজন, যা হরমোন, ভিটামিন ও পাচক তরল উৎপাদনে সাহায্য করে। তবে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলেই শরীরে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে, যার মধ্যে অন্যতম হলো চুলের পরিবর্তন।

উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে পেরিফেরাল ধমনী রোগ হতে পারে। এই রোগে শরীরের শিরাগুলো সংকুচিত হয়ে যায় এবং পায়ের দিকে পর্যাপ্ত রক্ত পৌঁছাতে পারে না। এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে, কখনো কখনো পায়ের লোম ঝরে পড়তে দেখা যায়। পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে পায়ের লোম দুর্বল হয়ে ঝরে যায়।

সম্প্রতি জনস হপকিন্সের গবেষকরা একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন। সেখানে একদল ইঁদুরকে উচ্চ কোলেস্টেরল ও উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার দেওয়া হয়েছিল এবং অন্য একটি দলকে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া হয়েছিল।

‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ চর্বি ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার খাওয়ানো ইঁদুরদের চুল অকালে পেকে গেছে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণে চুল ঝরে গেছে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, উচ্চ চর্বি ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার খাওয়া ইঁদুররা ৩৬ সপ্তাহের শুরু থেকেই চুলের তীব্র ক্ষতির সম্মুখীন হতে শুরু করে। গবেষকরা উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে ধূসর চুল বা চুল পড়ার সমস্যাগ্রস্ত পুরুষদের মধ্যেও একই ধরনের প্যাটার্ন খুঁজে পেয়েছেন।

চুলের গোড়া মজবুত রাখা, চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কোষে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভালো কোলেস্টেরল অপরিহার্য। কেরালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি গবেষণা ‘জার্নাল অব এন্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড রিপ্রোডাকশনে’ প্রকাশিত হয়েছে।

ওই গবেষণা অনুযায়ী, কোলেস্টেরলের অস্বাভাবিক মাত্রা জৈব সংশ্লেষণকে বাধা দিয়ে ফাইব্রোসিসের প্রবণতা বাড়ায়। যার কারণে চুলের গোড়া স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চুল পড়া শুরু হয়। এর ফলে স্বাভাবিক বয়সের আগেই টাক পড়ে যেতে পারে।

গবেষণা আরও জানাচ্ছে, কোলেস্টেরলের কারণে চুলের পরিবর্তনগুলো সিক্যাট্রিসিয়াল অ্যালোপেসিয়া নামক একটি প্রদাহজনিত চুল পড়ার রোগের কারণ হতে পারে। এই রোগে মাথার ত্বকের ভেতরের চুলের গোড়া সম্পূর্ণরূপে অকেজো হয়ে যায় এবং টাক পড়া শুরু হয়।

সুতরাং, শুধু হৃদরোগ নয়, উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে চুল পাকা, চুল ঝরা এমনকি টাকের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই নিজের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই ধরনের সমস্যা এড়ানো সম্ভব।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy