ক্রমশ বাড়ছে তাপমাত্রা, বাড়ছে মাথাব্যথাও: কারণ ও মুক্তির উপায়

গ্রীষ্মের আগমন যেন ক্রমশ জানান দিচ্ছে তার তীব্রতা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ। আর এই অসহ্য গরম শুধু পরিবেশকেই নয়, প্রভাব ফেলছে আমাদের শরীরেও। গরমকালে অনেকেই মাথাব্যথার সমস্যায় ভোগেন। চিকিৎসকদের মতে, গরমের সঙ্গে মাথাব্যথার সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। তাপমাত্রা যত বাড়ছে, এই সমস্যা ততই জটিল হচ্ছে। কিন্তু ঠিক কী কারণে গরমের সঙ্গে মাথাব্যথা বাড়ে? আসুন, জেনে নেওয়া যাক সেই কারণগুলি এবং এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তির কিছু সহজ উপায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গরমকালে মাথাব্যথার প্রধান কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল জলশূন্যতা (Dehydration)। এই সময় অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণে শরীর দ্রুত জল হারাতে থাকে। পর্যাপ্ত জল পান না করলে শরীরে জলশূন্যতা দেখা দেয়, যা মাথাব্যথার সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। ডিহাইড্রেশনের ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন কমে যায় এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহও ব্যাহত হয়। এর ফলস্বরূপ মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা এবং দুর্বল লাগার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

গরমকালে দীর্ঘক্ষণ সরাসরি সূর্যালোকের সংস্পর্শে এলে অনেকেরই মাথাব্যথা শুরু হতে পারে। অতিরিক্ত গরমে মাথার সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলি প্রসারিত হয়, যা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।

এছাড়াও, দীর্ঘক্ষণ প্রচণ্ড গরমে কাজ করলে শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে। অনেক সময় শরীর সেই অতিরিক্ত তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে না, যাকে হিট এক্সহশন বলা হয়। এই হিট এক্সহশনের অন্যতম লক্ষণ হল তীব্র মাথাব্যথা।

যাদের আগে থেকেই মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে, তাদের গরমে আরও বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। প্রখর রোদে বেশিক্ষণ থাকলে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে, যার সঙ্গে চোখব্যথা ও বমির মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

গরমকালে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করলে শরীরে দ্রুত জলশূন্যতা দেখা দেয়। এছাড়াও, এই সময় বেশি ঘাম হওয়ার কারণে সর্দি-কাশির সমস্যাও হতে পারে। অতিরিক্ত সর্দির কারণে নাক বন্ধ হয়ে সাইনুসাইটিসের সমস্যা দেখা দেয়, যা মাথাব্যথার একটি অন্যতম কারণ।

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, রাত জাগা অথবা একটানা দীর্ঘক্ষণ কাজ করলেও অনেক সময় মাথাব্যথা হতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তাও গরমকালে মাথাব্যথার সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

তবে এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়াও সম্ভব। কয়েকটি সহজ নিয়ম মেনে চললেই গরমকালে মাথাব্যথার সমস্যা অনেকাংশে কমিয়ে আনা যেতে পারে।

প্রথমত, শরীরকে জলশূন্যতার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা জরুরি। তৃষ্ণার্ত অনুভব না হলেও কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর জল পান করুন। এছাড়াও, জলীয় ফল ও পানীয় গ্রহণ করা যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, খুব প্রয়োজন ছাড়া সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টের মধ্যে বাইরে থাকা এড়িয়ে চলুন। এই সময় রোদের তেজ সবচেয়ে বেশি থাকে।

বাইরে বের হলে অবশ্যই সানগ্লাস, ছাতা ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে ত্বক ও চোখকে রক্ষা করা জরুরি।

অতিরিক্ত রঙিন ও আঁটসাঁট পোশাকের বদলে ঢিলেঢালা, হালকা রঙের ও সুতির আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন। হালকা রঙের পোশাক শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

এই সময় মরশুমি ফল, সবজি ও পর্যাপ্ত প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। হালকা ও স্বাস্থ্যকর খাবার শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, হঠাৎ করে মাথাব্যথা বাড়লে এবং তার সঙ্গে বমি বা জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজের ইচ্ছামতো ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।

গরমের এই সময়টাতে একটু সচেতন থাকলেই মাথাব্যথার মতো কষ্টকর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই সুস্থ থাকতে জলের সঠিক ব্যবহার এবং রোদ এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy