বিয়ের পরেই কেন বাড়ে ওজন? ‘লাভ ওয়েট’-এর আসল কারণ জানালেন বিজ্ঞানীরা

বিয়ের পর ওজন বাড়ার সমস্যা নতুন নয়। ভারতসহ বিশ্বের প্রায় সকল নবদম্পতিই এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। বিজ্ঞানের ভাষায় এই ওজন বৃদ্ধিকে বলা হয় ‘লাভ ওয়েট’। বিষয়টি নিয়ে হাসিঠাট্টা চললেও, এর পেছনের সত্যতা এবং কারণগুলো কী, তা নিয়ে সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করা হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছেন এবং তাদের গবেষণার ফলাফল ‘রিসার্চ গেট জার্নাল’-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় বিভিন্ন দেশের দুই হাজার জনের উপর সমীক্ষা চালানো হয়। ফলাফলে দেখা গেছে, ৭৯ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই বিয়ের পর ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে।

আশ্চর্যজনকভাবে, সমীক্ষায় দেখা গেছে বিয়ের পর নারীদের তুলনায় পুরুষদের ওজন বেশি বাড়ে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৬৯ শতাংশ পুরুষের ওজন বিয়ের পর ১০ কিলোগ্রামের বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে, নারীদের মধ্যে এই হার ৪৫ শতাংশ। কিন্তু এই ওজন বৃদ্ধির কারণগুলো কী?

গবেষণা বেশ কিছু কারণের দিকে আলোকপাত করেছে। তাদের মতে, বিয়ের পর খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে। প্রায়শই বাইরে খাওয়া-দাওয়া হয়, যা ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

এছাড়াও, বিয়ের পর ঘুমের অভাবও দেখা যায়। নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগে। যাদের বিয়ের আগে একে অপরের সাথে তেমন পরিচয় ছিল না, তাদের ক্ষেত্রে এই সময় আরও বেশি হতে পারে। ঘুমের অনিয়ম সরাসরি ওজন বাড়িয়ে দেয়।

ঘুম কমে যাওয়ার আরও একটি কারণ হলো নতুন দায়িত্ব। বিয়ের পর অনেক নতুন দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ে। সংসার চালানো এবং উপার্জনের চিন্তা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হয়।

তবে গবেষকরা এই কারণগুলোর চেয়েও একটি মনস্তাত্ত্বিক কারণের উপর বেশি জোর দিয়েছেন। সমীক্ষা থেকে তাদের দাবি, বিয়ের আগে অনেকেই নিজেদের সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্যের প্রতি অনেক বেশি যত্নশীল হন। অন্যদের চোখে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার একটি তাগিদ কাজ করে।

কিন্তু বিয়ের পর, যখন জীবনসঙ্গী পাওয়া হয়ে যায়, তখন সেই তাগিদ অনেকাংশে কমে যায়। নিজের চেহারার যত্ন নেওয়া এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা আগের মতো থাকে না। এই কারণেই বেশিরভাগ মানুষের বিয়ের পর ওজন বেড়ে যায়।

গবেষকরা বলছেন, এই সমস্যা সমাধানের কোনো সহজ উপায় নেই। স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়াই ‘লাভ ওয়েট’ প্রতিরোধের প্রথম এবং প্রধান পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে মানসিক এবং শারীরিক উভয় দিকেই সচেতন থাকতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমেই এই সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy