ছোট শিশুদের মুখে জিনিস দেওয়ার বিপদ এবং তাৎক্ষণিক করণীয়

ছোট শিশুদের সবকিছু মুখে দেওয়ার অভ্যাস খুবই সাধারণ একটি বিষয়। খেলনা থেকে শুরু করে হাতের কাছে যা পায়, শিশুরা কৌতূহলবশত তা মুখে দিয়ে পরীক্ষা করতে চায়। তবে এই অভ্যাসটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। অসাবধানতাবশত ছোট কোনো বস্তু শ্বাসনালিতে আটকে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। এই ধরনের দুর্ঘটনা যত দ্রুত শনাক্ত করা যায়, ততই শিশুর জীবন রক্ষা করা সহজ হয়।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হঠাৎ করে কোনো বাচ্চার কাশি শুরু হলে বা সে যদি বিষম খেতে শুরু করে এবং তার ঠিক আগেই যদি বাচ্চা ছোট কোনো জিনিস নিয়ে খেলছিল বলে জানা যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে হবে যে তার গলায় কিছু আটকে গেছে।

এক্ষেত্রে শিশুর মুখ দিয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে লালা বের হতে পারে। কাশি থাকবে, তবে সাধারণত জ্বর বা সর্দির মতো অন্য কোনো উপসর্গ দেখা যাবে না। অভিভাবকদের এই লক্ষণগুলি নজরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। সন্দেহ হওয়া মাত্রই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

শ্বাসনালিতে কিছু আটকে গেলে যা করবেন:

যদি শিশুর মুখ খুলে আটকে থাকা জিনিসটি দেখতে পান, তাহলে খুব সাবধানে সেটি বের করার চেষ্টা করুন। তাড়াহুড়ো করবেন না।
যদি জিনিসটি দেখা না যায়, তাহলে খোঁচাখুঁচি করা উচিত নয়। এতে আটকে থাকা বস্তু আরও গভীরে চলে যেতে পারে।
বাচ্চা যদি কাশতে সক্ষম হয়, তাহলে তাকে কাশতে দিন। কাশির মাধ্যমে অনেক সময় আটকে থাকা জিনিসটি বেরিয়ে আসতে পারে।
যদি বাচ্চার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তাহলে দ্রুত তার পিঠে চাপড় দিন।
বয়সভেদে পিঠে চাপড় দেওয়ার নিয়ম:

এক বছরের কম বয়সী শিশু: কোনো টুল বা চেয়ারের ওপর বসে শিশুকে আপনার কোলের ওপর উপুড় করে শুইয়ে দিন, খেয়াল রাখবেন যেন তার মাথা নিচের দিকে ঝুলে থাকে। এরপর শিশুর পিঠের মাঝখানে, একটু ওপরের দিকে আপনার হাতের তালুর নিচের অংশ দিয়ে জোরে জোরে পাঁচবার চাপড় দিন।
এক বছরের বেশি বয়সী শিশু: শিশুর পেছনে হাঁটু মুড়ে অথবা সোজা হয়ে দাঁড়ান। শিশুর বগলের নিচ দিয়ে দুই হাত ঢুকিয়ে, জাপটে ধরার ভঙ্গিতে শিশুর পেটের ওপরের অংশ বরাবর আপনার হাত রাখুন। এবার অন্য হাত দিয়ে প্রথম হাতের কবজি ধরুন। এরপর দুই হাত দিয়ে ওপরের দিকে এবং ভেতরের দিক বরাবর শিশুর পেটে জোরে জোরে পাঁচবার চাপ দিন।
যদি এই পদ্ধতিগুলির পরেও কোনো কাজ না হয় অথবা শিশু জ্ঞান হারাতে শুরু করে, তাহলে দ্রুত কাউকে সাহায্যের জন্য ডাকুন। একইসঙ্গে শিশুর মুখে মুখ লাগিয়ে অথবা নাকে শ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করুন এবং যত দ্রুত সম্ভব তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান।

এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে অভিভাবকদের আরও বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ছোট পুঁতি, মার্বেল, বোতাম, ফলের বিচি এবং ছোট পার্টসযুক্ত খেলনা শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা উচিত। এছাড়াও, শিশুদের খেলনা বা জামাকাপড় কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে সেগুলিতে পুঁতি বা ছোট ঘণ্টা লাগানো না থাকে, যা শিশুরা সহজেই খুলে মুখে দিতে পারে। সামান্য সতর্কতা অবলম্বন করলেই শিশুদের এই ধরনের বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy