বর্তমানে স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ ছাড়া জীবন প্রায় অকল্পনীয়। দিনের বেশিরভাগ সময় মানুষ এই ডিভাইসগুলোর সঙ্গেই কাটায়। এসব ডিভাইসে জমা থাকে মানুষের মূল্যবান স্মৃতি, প্রিয়জনদের ছবি এবং অনেক সময় অতি ব্যক্তিগত তথ্য ও ভিডিও। তবে, সামান্য অসাবধানতা বা অপ্রত্যাশিত ঘটনায় এসব ব্যক্তিগত তথ্য চলে যেতে পারে অন্যের হাতে, এমনকি হতে পারেন ভয়ানক ব্ল্যাকমেইলের শিকার।
সম্প্রতি রাজধানীতে এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। বেসরকারি চাকরিজীবী এক নারী তার ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে গেলে সেটি মেরামতের জন্য একটি দোকানে দেন। ল্যাপটপটি ফেরত পাওয়ার পরই তার সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্টগুলোর নিয়ন্ত্রণ চলে যায় সেই মেরামতকারীর হাতে। এরপর শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল। শুধু তাই নয়, ওই নারীর নাম ও মোবাইল নম্বর একটি ‘কল গার্ল’ ওয়েবসাইটে যুক্ত করে দেওয়া হয়, যার ফলে প্রতিদিন শত শত অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে ফোন আসা শুরু হয়।
ভুক্তভোগী নারী জানান, ‘আমার ল্যাপটপটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, আমি কোনো কিছু লগআউট করতে পারিনি। ওরা ঠিক করার পর অটো অন হয়ে গেছে। সে আমার পাসপোর্টের স্ক্যান কপি, ভোটার আইডি কার্ডের কপি, আমার বিয়ের ছবিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিজের কাছে রেখে দেয়। এরপর সে আমার কাছে টাকা দাবি করে, অন্যথায় সেগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।’
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী নারী ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম ডিভিশনে অভিযোগ করলে গোয়েন্দারা দ্রুত পদক্ষেপ নেন। অভিযানে চঞ্চল সাহা নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে একই কায়দায় বহু নারীকে হয়রানি করে আসছে।
ডিএমপি’র সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইমের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম এই বিষয়ে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে যেটা জেনেছি, তার (ডিভাইস মেরামতকারী ব্যক্তি) কাছে যেসব মোবাইল বা ল্যাপটপ ঠিক করতে দেয়া হতো, তিনি সেগুলো ঠিক করার পর ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও খুঁজতেন। সেসব ডিভাইসে এ ধরনের কিছু খুঁজে পেলে নামে-বেনামে রেজিস্ট্রেশন করা হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট থেকে ভুক্তভোগীর পরিচিতজনদের মোবাইলে পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন।’
গোয়েন্দারা আরও জানান, ব্ল্যাকমেইলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও তৈরি না করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তবে, একান্ত ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও ধারণ করা হলে তা নিরাপদে রাখার দায়িত্ব ব্যক্তিকেই নিতে হবে। পাশাপাশি, কোনো ডিভাইস নষ্ট হলে বা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হলে সেটি মেরামতের জন্য দেওয়ার আগে অবশ্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল অ্যাকাউন্ট থেকে লগআউট করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এই ঘটনা ব্যক্তিগত ডেটা এবং অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়ে আরও একবার উদ্বেগ সৃষ্টি করলো।