স্তন ক্যানসার: বাড়ছে ঝুঁকি, জানুন কারণ ও সচেতন হোন

প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার মানুষ স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন, যার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। স্তন ক্যানসার আজ নারীদের কাছে এক আতঙ্কের নাম। উদ্বেগজনকভাবে, এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে এবং ১৭ বছর বয়সী তরুণী থেকে শুরু করে বৃদ্ধা – সব বয়সের নারীরাই এখন স্তন ক্যানসারের ঝুঁকির মুখে।

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। আর নারীদের মধ্যে যে সকল ক্যানসার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে স্তন ক্যানসার শীর্ষে অবস্থান করছে।

স্তন ক্যানসার আসলে কী?

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্তনের কিছু কোষ যখন অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করে এবং অনিয়মিতভাবে অতিরিক্ত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়, তখন তাকে স্তন ক্যানসার বলা হয়। এই টিউমার রক্তনালী, লসিকা (কোষ-রস) ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে। এই ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতাই ক্যানসারের মূল বৈশিষ্ট্য।

স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণগুলো:

লিঙ্গ: পুরুষদের তুলনায় নারীদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।
পারিবারিক ইতিহাস: মা, বোন বা পরিবারের অন্য কোনো নারী সদস্য স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের নারীদের মধ্যেও এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
মাসিক শুরুর ও বন্ধের বয়স: ১২ বছর বয়সের আগে মাসিক শুরু হলে এবং ৫০ বছর বয়সের পর মাসিক বন্ধ হলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
বয়স বৃদ্ধি: বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে, বিশেষ করে ৫০ বছর পার হলে।
বিয়ে ও সন্তানধারণ: বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলে অথবা ৩০ বছর বয়সের পরেও সন্তান জন্ম না দিলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
বুকের দুধ পান না করানো: সন্তানকে নিয়মিত বুকের দুধ না খাওয়ানোর ফলেও অনেক নারীর স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণ স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার: প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার, কৃত্রিম মিষ্টি ও রংযুক্ত খাবার দীর্ঘদিন ধরে খেলে নারী ও পুরুষ উভয়েই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে।
শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ও অতিরিক্ত ওজন: যারা একেবারেই শরীরচর্চা করেন না তাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। অতিরিক্ত ওজনও এই রোগের একটি অন্যতম কারণ।
রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার: এয়ার ফ্রেশনার, কীটনাশক, কেমিক্যালযুক্ত কসমেটিকস ও ডিওডোরেন্ট দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
ভুল মাপের অন্তর্বাস ও সারাক্ষণ পরিধান: সঠিক মাপের অন্তর্বাস না পরলে স্তনের আকার পরিবর্তিত হতে পারে, যা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও, সারাক্ষণ অন্তর্বাস পরে থাকার কারণে ঘাম বের হতে পারে না, ফলে আর্দ্রতা জমে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। রাতে অন্তর্বাস ছাড়া ঘুমানোর অভ্যাস করা উচিত।
ডিওডোরেন্টের উপাদান: ডিওডোরেন্টে থাকা কেমিক্যাল, বিশেষ করে অ্যালুমিনিয়াম জাতীয় উপাদান, স্তন ক্যানসারসহ ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
জেনেটিক কারণ: কিছু জিনগত কারণেও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বিআরসিএ ১ ও বিআরসিএ ২ নামের জিনের মিউটেশন ৫-১০ শতাংশ স্তন ক্যানসারের জন্য দায়ী।
সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর অক্টোবর মাস বিশ্বব্যাপী ‘ব্রেস্ট ক্যানসার সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশেও এই মাসটি স্তন ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য বিশেষভাবে পালিত হয়ে থাকে। এই রোগের ঝুঁকি সম্পর্কে জানা এবং সচেতন থাকার মাধ্যমেই আমরা অনেকাংশে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy