আপনার শিশু কি প্রায়শই বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বা পরিবেশে জড়তা অনুভব করে? অন্যদের সাথে মিশতে বা কথা বলতে দ্বিধা বোধ করে? এমন পরিস্থিতিতে তাকে সাহায্য করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো তার মানসিকতাকে ভালোভাবে বোঝা এবং বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতিকে তার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, লজ্জা কোনো চারিত্রিক ত্রুটি নয়। বরং এটি একটি স্বাভাবিক আবেগ। শিশুকে এই বিষয়টি বোঝানো জরুরি এবং তাকে আশ্বস্ত করতে হবে যে লাজুক হওয়াতে লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই।
সন্তানের জন্য প্রথম ও প্রধান শিক্ষাক্ষেত্র হলো তার পরিবার। শিশুরা তাদের বাবা-মা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেই অনেক কিছু শেখে। তাই যে বাবা-মায়েরা চান তাদের সন্তান সামাজিক পরিবেশে স্বতঃস্ফূর্ত আচরণ করুক, তাদের উচিত নিজেদেরও বাচ্চাদের সামনে বহির্মুখী আচরণ করা।
লাজুকতা কাটাতে বাবা-মায়ের করণীয়:
আবেগ শনাক্তকরণ ও আলোচনা: শিশুকে তার বিভিন্ন আবেগ, বিশেষ করে লজ্জার অনুভূতি শনাক্ত করতে এবং সে বিষয়ে কথা বলতে উৎসাহিত করুন। তাকে বোঝান যে সব ধরনের আবেগই স্বাভাবিক এবং এগুলো নিয়ে আলোচনা করা যায়।
ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি: সন্তানের সামনে এমন একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন যেখানে সে নিজেকে সুরক্ষিত মনে করে এবং সামাজিক পরিস্থিতিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
বহির্মুখী আচরণের প্রশংসা: যখনই আপনার শিশু কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে বা পরিবেশে অন্যদের সাথে মিশতে চেষ্টা করে বা কথা বলে, তখনই তার প্রশংসা করুন। এমনকি তার সামান্যতম ইতিবাচক পরিবর্তনকেও স্বীকৃতি দিন।
সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টি: আপনার শিশুকে বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতির অভিজ্ঞতার সুযোগ করে দিন। উদাহরণস্বরূপ, তাকে তার বন্ধু বা বন্ধুদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাতে উৎসাহিত করুন অথবা তাদের সাথে বাইরে খেলতে যেতে দিন।
ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করা: শিশুকে ধীরে ধীরে নতুন সামাজিক পরিবেশের সাথে পরিচিত করুন। হঠাৎ করে কোনো ভীড় বা অপরিচিত পরিবেশে নিয়ে গেলে তার জড়তা আরও বাড়তে পারে।
উপহারের মাধ্যমে আগ্রহ সৃষ্টি: শিশুকে সামাজিক পরিস্থিতিতে অংশ নিতে উৎসাহিত করার জন্য ছোটখাটো আকর্ষণীয় উপহারের ব্যবস্থা করতে পারেন। এটি তাদের আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করবে।
তুলনা পরিহার: কখনোই অন্য শিশুদের সাথে আপনার সন্তানের তুলনা করবেন না। প্রতিটি শিশুই আলাদা এবং তাদের নিজস্ব গতিতে সামাজিক দক্ষতা অর্জন করে।
ধৈর্য ধারণ: সন্তানের লাজুকতা কাটাতে সময় লাগতে পারে। তাই ধৈর্য ধরুন এবং তাকে ক্রমাগত সমর্থন জুগিয়ে যান।
চাপ সৃষ্টি না করা: শিশুকে কোনো সামাজিক পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণের জন্য জোর করবেন না, যা সে অপমানজনক বা অস্বস্তিকর মনে করে। তাকে নিজের মতো করে মিশতে দিন।
মনে রাখবেন, সন্তানের আত্মবিশ্বাস এবং সামাজিক দক্ষতা বিকাশে পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভালোবাসা, সমর্থন এবং সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে আপনার সন্তান অবশ্যই সামাজিক জড়তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।