শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা যেভাবে কমায় তুলসি পাতা, জানুন

শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই বিপজ্জনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, শরীরের এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল বেশি মাত্রায় বেড়ে গেলে হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে কোলেস্টেরল বিশ্বে প্রতি বছর ২.৬ মিলিয়ন মৃত্যুর কারণ হয়, যা মোট মৃত্যুর ৪.৫ শতাংশ।

কোলেস্টেরল কী?

কোলেস্টেরল হলো এক ধরনের মোমজাতীয় পদার্থ, যা রক্তের শিরায় পাওয়া যায়। যদিও এটি লিভার দ্বারা উত্পাদিত হয়, তবে এটি অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার কারণেও তৈরি হয়।

একটানা চর্বিযুক্ত খাবার খেলে ও কোনো ধরনের ব্যায়াম না করলে তা রক্তের শিরায় জমা হতে থাকে। এর মাত্রা বেড়ে যায় ও রক্ত প্রবাহকে থামাতে বা ধীর করে দিতে পারে। যা পরবর্তী সময়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

কীভাবে কোলেস্টেরল কমাবেন?
চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা ও ব্যায়াম করার মাধ্যমে শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমানো যায়। তবে এর পাশাপাশি কিছু উপকারী ভেষজও ব্যবহার করতে পারেন, যার মধ্যে একটি হলো তুলসী গাছ।

জানলে অবাক হবেন, তুলসীতে থাকা পুষ্টিগুণ রক্তের শিরায় জমে থাকা থাকা খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে।

কীভাবে তুলসী পাতা খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে

‘জার্নাল অব ফাংশনাল ফুড’ এ প্রকাশিত ২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের বিপাকীয় ব্যাধি দূর করতে তুলসী বেশ কার্যকরী। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, তুলসী খাওয়ার মাধ্যমে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো সম্ভব।

আইওপি সায়েন্স.অর্গ-এ প্রকাশিত আরও এক সমীক্ষায় জানা গেছে, তুলসী পাতায় পলিফেনল যৌগ আছে যেমন- ফ্ল্যাভোনয়েড ও ট্যানিন। যা মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে।

এছাড়া চর্বির অক্সিডেশন প্রতিরোধ করে (যা এথেরোস্ক্লেরোসিসের সবচেয়ে বড় কারণ)। এথেরোস্ক্লেরোসিস হলো চর্বি, কোলেস্টেরল, ধমনীর দেয়ালে ও তার উপর অন্যান্য ফলক বা প্লাক জমায়া।

গবেষকরা ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালান। কয়েক সপ্তাহ ধরে বেশ কিছু ইঁদুরকে তুলসী পাতার রস পান করানোর পর তারা দেখেছেন, দিনে মাত্র ২০-৮০ মিলিগ্রাম তুলসীর রস পান করলে তা উল্লেখযোগ্যভাবে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে।

এরপর গবেষকরা জানান, মাত্র ৭ দিন নিয়ম করে তুলসীর রস পান করলে শরীরের ক্ষতিকর এলডিএলবা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে পারে।

কীভাবে তুলসী সেবন করবেন?

তুলসীকে আয়ুর্বেদিক ভেষজ উদ্ভিদের রানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রাচীনকাল থেকে বহু রোগের ঐতিহ্যগত চিকিত্সার জন্যও ব্যবহৃত হয়ে আসছে তুলসী। রান্নায় ব্যবহারের পাশাপাশি এই পাতা কাঁচা চিবিয়েও খেতে পারেন কিংবা এর জুসও পান করতে পারেন।

তুলসী কতটা সেবন করবেন?

একই গবেষণায় বলা হয়েছে, তুলসী পাতা শুধু কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় না বরং রক্তে শর্করা ও রক্তচাপের মাত্রাও কমায়। আপনি যদি উচ্চ কোলেস্টেরলে ভোগেন তাহলে এটি কমাতে বা দূর করতে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ গ্রাম তুলসী পাতার রস পান করুন।

সতর্কতা: আপনার যদি তুলসী পাতায় অ্যালার্জি থাকে তাহলে তা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। না জেনে বুঝে কোনো ধরনের ভেষজ সেবন থেকে দূরে থাকুন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy