মুঠোফোনের নেশা কেড়ে নিচ্ছে শৈশব! আপনার সন্তানও কি আসক্ত? জানুন মুক্তির উপায়

স্মার্টফোন বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বড়দের পাশাপাশি আজকাল ছোট শিশুরাও এই গ্যাজেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। অনেক অভিভাবকই বাচ্চাদের শান্ত রাখতে অথবা খাওয়ানোর সময় তাদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিচ্ছেন।

ট্যাবলেট বা মোবাইলে ভিডিও দেখতে দেখতে খাওয়ানো অথবা অবাধ্য সন্তানকে বসিয়ে রাখার জন্য স্মার্টফোন ধরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা আজকাল হামেশাই চোখে পড়ে। এর ফলে শিশুরা খুব দ্রুত এই গ্যাজেটের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। মোবাইল ফোন থেকে নির্গত রেডিয়েশন যেমন শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি করছে, তেমনই অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে তাদের চোখেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

যেসব শিশুরা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ যেমন খেলাধুলা, দৌড়ানো বা সাইকেল চালানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে, তারা মোবাইল বা ভিডিও গেমে বেশি আসক্ত হয়। এর ফলে তাদের নানা রকম দক্ষতার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে এবং বাস্তব জীবনে কার্যকর যোগাযোগ গড়ে তোলার ক্ষমতাও ব্যাহত হয়। তবে পরিবার থেকে একটু সচেতন হলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তি কমাতে বিশেষজ্ঞরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। আসুন, সেই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক—

স্মার্টফোন আসক্তি কমাতে যা করণীয়:

>>> খেলনা নয়, প্রয়োজনীয় যন্ত্র: মনে রাখতে হবে, বাড়ির অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রের মতোই (ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি) মোবাইল ফোনও একটি অতিপ্রয়োজনীয় জিনিস। এটি শিশুর খেলার সামগ্রী নয়। শিশুদের বুঝিয়ে বলুন টিভি বা মোবাইলের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তির খারাপ দিকগুলো।

>>> একাকিত্ব দূর করুন: শিশুদের একাকিত্ব দূর করার চেষ্টা করুন। তাদের জন্য নানা ধরনের অ্যাক্টিভিটির পরিকল্পনা করুন। যেমন নাচ, গান, আবৃত্তি অথবা কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখান। সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে মিশতে ও খেলতে দিন।

>>> বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন: শিশুদের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারলে তা খুবই ভালো ফল দেবে। প্রতিদিন রাতে শোবার আগে সন্তানকে যদি বই থেকে গল্প পড়ে শোনান, তাহলে তাদের মধ্যে বইয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মাবে।

>>> বাইরে ঘোরার সুযোগ দিন: মাঝেমধ্যে তাদের নিয়ে খেলাধুলা করতে অথবা ঘুরতে যান। তাদের শৈশবকে উপভোগ্য করে তুলুন। যারা শহরে থাকেন, তারা সপ্তাহে একদিন অথবা মাসে দু’দিন শিশুকে নিয়ে প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে পারেন।

>>> নজরে রাখুন অনলাইন জগৎ: শিশুরা ইন্টারনেটে কী ধরনের ভিডিও দেখছে, সেদিকে নিয়মিত খেয়াল রাখুন।

>>> স্ক্রিন টাইমের সময় নির্ধারণ: শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহার এবং স্ক্রিন টাইমের সময় নির্দিষ্ট করে দিন। অতিরিক্ত সময় ধরে মোবাইল বা ট্যাবলেটের সামনে বসে থাকা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

>>> ঘরের কাজে দায়িত্ব দিন: শিশুদের ঘরের ছোট ছোট কাজে দায়িত্ব দিন। সংসারের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতে তাদের উৎসাহিত করুন।

>>> খাওয়ানো বা ঘুমের সময় এড়িয়ে চলুন: শিশুকে খাওয়ানোর সময় অথবা ঘুমোতে যাওয়ার আগে মোবাইল গেম বা কার্টুন দেখানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন। এই সময় তাদের গল্প শোনানোর অভ্যাস তৈরি করুন।

>>> গুণগত সময় দিন: নিজেদের ব্যস্ততার কারণে সন্তানকে মোবাইল গেম বা ভিডিওতে আসক্ত করা এক প্রকার অপরাধের শামিল। অনেক অভিভাবক নিজেরাই ফেসবুক, টিভি সিরিয়াল বা গেমে আসক্ত থাকেন। সন্তানের সাথে গুণগত সময় কাটান। তাদের সাথে কথা বলুন, খেলুন এবং তাদের আগ্রহের বিষয়ে মনোযোগ দিন।

পরিবারের সামান্য সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তির মতো ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শৈশবকালে সঠিক পরিচর্যা পেলে আপনার সন্তান একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন লাভ করবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy