বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে কোলাজেন উৎপাদন কমতে শুরু করে। এর ফলে ত্বকে বলিরেখা, সূক্ষ্ম রেখা এবং ঝুলে যাওয়ার মতো বার্ধক্যের লক্ষণগুলো স্পষ্ট হতে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২৫ বছর বয়সের পর থেকে আমাদের শরীরে কোলাজেনের প্রাকৃতিক উৎপাদন প্রতি বছর প্রায় ১ শতাংশ হারে কমতে থাকে। ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন দু’বার মুখ ধোয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা এবং ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত পণ্য ব্যবহার না করার পাশাপাশি কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করাও অত্যন্ত জরুরি। এমন কিছু খাবার রয়েছে যা সরাসরি ত্বকে কোলাজেনের গঠন বাড়াতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই খাবারগুলো:
১. সাইট্রাস ফল: জাম্বুরা, কমলা এবং লেবুর মতো সাইট্রাস ফলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। শরীরের কোলাজেন তৈরির জন্য ভিটামিন সি অপরিহার্য। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হওয়ায়, ভিটামিন সি ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ত্বকের কোষের ক্ষতি রোধ করে। তাই নিয়মিত এই ধরনের ফল খেলে ত্বক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়।
২. হাড়ের ঝোল: কোলাজেনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎস হলো হাড়ের ঝোল। এটি তৈরি করতে প্রাণীর হাড় এবং সংযোগকারী টিস্যু কয়েক ঘণ্টা ধরে সিদ্ধ করা হয়, যার ফলে কোলাজেন ভেঙে যায় এবং ঝোলের মধ্যে মিশে যায়। হাড়ের ঝোল সংযোগকারী টিস্যু এবং হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত হওয়ায় এটি অ্যামাইনো অ্যাসিড, কোলাজেন, গ্লুকোসামিন, কনড্রয়েটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।
৩. সার্ডিন: মাছের হাড়, ত্বক এবং আঁশে বেশিরভাগ কোলাজেন থাকে। যেহেতু সার্ডিন মাছের প্রায় পুরোটাই খাওয়া হয়, তাই কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে এটি চমৎকার। সার্ডিনে প্রচুর পরিমাণে কোলাজেন পাওয়া যায়। এটি সাধারণত ক্যানে পাওয়া যায় এবং ক্যান থেকে সরাসরি খাওয়া, ভাজা বা সালাদ অথবা টোস্টের সাথে পরিবেশন করা যেতে পারে।
৪. বেরি: স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি বা ব্লুবেরির মতো বেরি জাতীয় ফলগুলো আপনার ত্বকের জন্য কোলাজেন সমৃদ্ধ সুস্বাদু খাবারের উৎস হতে পারে। এগুলো কোলাজেনের সংশ্লেষণকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ত্বকের যে ক্ষতি হয়, তার বিরুদ্ধে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুরক্ষা প্রদান করে।
৫. ব্রকলি: আপনার খাবারে আরও ভিটামিন সি যোগ করার জন্য ব্রকলি একটি সুস্বাদু এবং সহজলভ্য সবজি হতে পারে। রান্না করা বা কাঁচা এক কাপ ব্রকলিতে প্রায় সারাদিনের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি কোলাজেন গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে মনে রাখতে হবে, কোলাজেনের সংশ্লেষণের জন্য ভিটামিন সি প্রয়োজনীয় হলেও, একই সময়ে কোলাজেন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার বা উচ্চ কোলাজেনযুক্ত খাবার খাওয়ার আবশ্যকতা নেই।
সুতরাং, ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে এবং বার্ধক্যের লক্ষণগুলো কমাতে এই কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবারগুলো আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন। একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং সঠিক জীবনযাত্রাই তারুণ্য ধরে রাখার মূল চাবিকাঠি।
