যৌনতাকে কেবলমাত্র শারীরিক ক্রিয়া বললে একটু কমিয়েই দেখা হয় – তা দু’জন মানুষের মধ্যেকার সেতু এবং নর-নারীকে অটুট বন্ধনে বেঁধে রাখতে পারে। কিন্তু তার ব্যতিক্রম নিয়ে বিশেষ আলোচনা না হলেও তা যে স্বাভাবিক, চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাস দেখলে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। মিশরীয় সভ্যতার যুগেও মিলনকালীন তীব্র ব্যথাবোধ ও তার নিরাময় নিয়ে চিন্তাভাবনা হত, তার প্রমাণ ছড়িয়ে আছে সে সময়কার চিকিৎসাবিষয়ক নানা তথ্যে। প্রাচীন গ্রিসেও এ নিয়ে গবেষণা হয়েছে বিস্তর। ইদানীং চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনেক উন্নতি হয়েছে এবং এই ধরনের সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়াটাও সহজ হয়ে গিয়েছে।
ঠিক কোন কোন কারণে যৌন মিলনের সময় ব্যথা হয়?
প্রথমবার মিলনের সময় একটু ব্যথাবোধ বা অস্বস্তি হওয়াটাই স্বাভাবিক – সেটি হিসেবের মধ্যে ধরাটা ঠিক না। তা ছাড়া যদি মানসিকভাবে আপনি কাছাকাছি আসার জন্য প্রস্তুত না থাকেন, বা অতিরিক্ত স্ট্রেস বা টেনশনের শিকার হন, সেক্ষেত্রে কিন্তু সাবলীল মিলনের আশা না করাই ভালো। যদি ইন্টারকোর্সের আগে যৌনাঙ্গ যথাযথভাবে উত্তেজিত ও পিচ্ছিল না হয়, তা হলেও অস্বস্তি হতে পারে। তাই ফোরপ্লের পিছনে বেশ খানিকটা সময় ব্যয় করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু শরীর উত্তেজিত ও মন প্রস্তুত হওয়ার পরেও যদি অস্বস্তি থাকে, তা হলে বুঝতে হবে শরীরে কোনও সমস্যা আছে। এই পরিস্থিতিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াটাই হচ্ছে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ এন্ডোমেট্রিওসিস বা ওভারিতে সিস্ট থাকলেও মিলন খুব সুখকর হয় না। অনেকের আবার মিলনের পর ভ্যাজাইনা বা তার আশপাশের অঞ্চল, লাবিয়া, ইউটেরাস, পেলভিক রিজিয়ন, কোমর বা ব্লাডারে তীব্র ব্যথা হয়।
শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এ কথা সত্যি যে কিছু কিছু ত্বকের সমস্যা আপাতভাবে তেমন না ভোগালেও যৌন সম্পর্ককালীন ব্যথার জন্য দায়ী হতে পারে। আপনি বাইরে থেকে দেখে কিছু বুঝতে পারবেন না, কিন্তু ভালভার ত্বকে আলসার হলে বা ফাটল দেখা দিলে ইন্টারকোর্সের সময় যন্ত্রণা হতে পারে। হয়তো আপনি যে সাবান বা ভ্যাজাইনাল ওয়াশটি ব্যবহার করছেন, তার কারণেই ত্বকে সংক্রমণ হচ্ছে! অথবা আপনার ইউরিনে এমন কোনও সংক্রমণ আছে যে কারণে ক্ষত সারছে না কিছুতেই – যাই হোক না কেন, আপনার গাইনিকোলজিস্টই এ সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। সমস্যা থাকতে পারে ভালভায়, ইস্ট ইনফেকশেনর কারণে ভ্যাজাইনায় তীব্র প্রদাহ হতে পারে। সন্তান জন্মের পর পরই ভ্যাজাইনাল সেক্স অস্বস্তির কারণ হতে পারে – বিশেষ করে যাঁদের স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। তবে কিছু মাস অতিবাহিত হলে আবার তা ঠিক হয়ে যাওয়ারই কথা।
স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে কী করবেন
ডাক্তার দেখান এবং তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতির উপর আস্থা রাখুন। মনে রাখবেন, শারীরিক সুখানুভূতি উপভোগ করার আরও অনেক রাস্তার মধ্যে ইন্টারকোর্স একটি মাত্র। ওরাল সেক্স বা পারস্পরিক মাস্টারবেশনের মতো পদ্ধতিগুলি ট্রাই করে দেখতে পারেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে। তবে সবার আগে সঙ্গীর সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন। যৌনতা নিয়ে কথা না বলে সমস্যা চেপে রাখাটাই আমাদের অভ্যেস, তবে তাতে কিন্তু লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়।