ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে আলিঙ্গন বা জড়িয়ে ধরা একটি সার্বজনীন রীতি। শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রী নন, মা-বাবা, ভাই-বোন কিংবা বন্ধু-বান্ধব—কাউকে আলিঙ্গন করলেই আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে পারে। ইতিবাচক শারীরিক স্পর্শ আমাদের মন ও শরীরকে ভালো রাখে এবং আলিঙ্গনের রয়েছে একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা।
বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ করেছেন যে আলিঙ্গন মানুষের ভয় ও ভীতি দূর করে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এটি অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি কমায়, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং এমনকি শারীরিক ব্যথাও কমাতে সহায়ক।
প্রায় ৪০ হাজার অংশগ্রহণকারীর উপর করা এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, আলিঙ্গনের মাধ্যমে আমরা স্বস্তি, উষ্ণতা ও ভালোবাসা অনুভব করি। তবে প্রশ্ন হলো, ঠিক কতক্ষণ প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরলে এই উপকারগুলো পাওয়া যাবে?
বন্ধুদের সাথে দেখা হলেই আমরা অনেকেই ক্ষণিকের জন্য (১-২ সেকেন্ড) আলিঙ্গন করে থাকি। কিন্তু জানেন কি, আলিঙ্গনের সময়কালের উপরও নির্ভর করে আমরা কতটা ভালো বা আনন্দ অনুভব করব।
একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ১, ৫ ও ১০ সেকেন্ডের জন্য আলিঙ্গন করানো হয়। ফলাফলে দেখা যায়, ১ সেকেন্ডের আলিঙ্গনকে অংশগ্রহণকারীরা সবচেয়ে কম আনন্দদায়ক বলে মনে করেছেন। অন্যদিকে, ১০ সেকেন্ডের আলিঙ্গন সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আলিঙ্গনের সময়কাল আমাদের শরীরকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। প্রিয়জনকে আলিঙ্গন করার মাধ্যমে শরীরে ‘সুখী হরমোন’ বা ‘অক্সিটোসিন হরমোন’ উৎপন্ন হয়। এই হরমোনকে ‘আলিঙ্গন হরমোন’ বা ‘প্রেম হরমোন’ নামেও অভিহিত করা হয়। তাই যত বেশি সময় ধরে আলিঙ্গন করা হয়, তত বেশি পরিমাণে এই হরমোন উৎপন্ন হয় এবং আমরা তত বেশি আনন্দ অনুভব করি।
পারিবারিক থেরাপিস্ট ভার্জিনিয়া সাতির আলিঙ্গনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন ৪টি আলিঙ্গন প্রয়োজন। সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ৮টি আলিঙ্গন এবং ব্যক্তিগত বৃদ্ধির জন্য দিনে ১২টি আলিঙ্গন করা উচিত।
আলিঙ্গনের যেহেতু কোনো নেতিবাচক দিক নেই, তাই এটিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। বরং প্রতিদিন আপনার প্রিয়জনদের আলিঙ্গন করার মাধ্যমে নিজের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যকে উন্নত রাখুন। একটি উষ্ণ আলিঙ্গন শুধু ভালোবাসাই প্রকাশ করে না, এটি আপনার সুস্থ জীবনেরও চাবিকাঠি হতে পারে।